ক্যান্টিন ম্যানেজারকে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ নেতার ক্ষমতা জাহির!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে বিনা পয়সায় খাবার না দেয়ায় ক্যান্টিন ম্যানেজারকে রক্তাক্ত করেছে এক ছাত্রলীগ নেতা। একই সাথে অপর এক ক্যান্টিন কর্মচারীকে মারধর করে নিজ ক্ষমতা জাহির করেছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ওয়াসিফ হাসান পিয়াস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

১০ ডিসেম্বর, রোববার রাতে এ ঘটনা ঘটে। আহত ম্যানেজারের নাম শফিকুল ইসলাম ও কর্মচারীর নাম মনির হোসেন। আহতদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ক্যান্টিন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রাতে হলের ক্যান্টিনে খাবার খেতে আসেন পিয়াস। ক্যান্টিনে আগে টাকা পরিশোধ করে টোকেন নিয়ে খাবার টেবিলে বসার নিয়ম থাকলেও পিয়াস টোকেন ছাড়াই ক্যান্টিন কর্মচারীকে খাবার দেয়ার জন্য বলেন। এ সময় ওই কর্মচারী টোকেন চাইলে তিনি টোকেন ছাড়াই খাবার দেয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকেন। কর্মচারী টোকেন ছাড়া খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বেধড়ক মারধর করেন।

কর্মচারীকে মারধর করার পরে পেশীশক্তির বলে খাবার খেয়ে চলে যাওয়ার সময় ম্যানেজারের উপর হামলা চালান এই ছাত্রলীগ নেতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, খাওয়া শেষে যাওয়ার সময় ক্যান্টিন পরিচালক শফিক ছাত্রলীগ নেতা পিয়াসের উদ্দেশে বলেন, ‘একটা ছেলেকে না মেরে আমাকে বললেই খাবার দিয়ে দিতাম।’

পরিচালক শফিকের এই মন্তব্যের পর পিয়াস আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যান এবং লাফিয়ে ক্যাশ টেবিলের ওপর উঠে ক্যাশ বাক্স লাথি দিয়ে ফেলে দেন। সেখানে দাঁড়িয়ে শফিককে গুরুতর আহত করে কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে দিতে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে যান তিনি। এ সময় শফিকের চোখ ফেটে ফিনকি দিযে রক্ত বের হতে দেখে অন্যান্য ক্যান্টিন কর্মচারীরা তাকে ও কর্মচারী মনিরকে উদ্ধার করে রিকশাযোগে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ওয়াসিফ হাসান পিয়াস

ঘটনার বিষয়ে আহত ক্যান্টিন কর্মচারী মনির বলেন, ‘আমি শুধু বলেছি ভাই টোকেন ছাড়া খাবার দেয়া নিষেধ। সে সাথে সাথে আমার পেটে জোড়ে লাথি দেয় এবং মারতে থাকে। এখনো আমার পেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে।’

ক্যান্টিন পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘টোকেন চাওয়ায় প্রথমে তিনি (পিয়াস) এক ক্যান্টিন বয়কে মারধর করেন। পরে আমি তার সাথে কথা বললে তিনি ক্যাশবক্সের উপরে উঠে আমাকেও লাথি ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এতে আমার চোখে আঘাত লেগে রক্ত বের হয়ে যায়।’

অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পিয়াস এর আগেও একাধিকবার ক্যান্টিন কর্মচারীদের মারধর করেছেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েক দফা চেষ্টা করেও ছাত্রলীগ নেতা পিয়াসকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে এসএম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল বলেন, ‘টোকেন ছাড়া খাবার নেয়া ঠিক না। পিয়াস যে কাজ করেছে তা কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। আমরা হল শাখার পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীকাল এ নিয়ে বসা হবে।’

এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, ‘সহকারী আবাসিক শিক্ষক জাহিদুল আরেফিন চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’