সাকিব-তামিম: বাংলাদেশের সত্যিকারের ‘মানিকজোড়’

বিশ্বমঞ্চে সদাপট উপস্থিতি নিয়ে যে কজন বাংলাদেশি পুরো জাতিকে গর্বিত করেছেন বা করে যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে সাকিব আল হাসান যে এক নম্বরে, এ কথায় নিশ্চয় স্কুলের বাচ্চারাও দ্বিমত করবে না! সাকিবের পরপর যদি তামিম ইকবালের নাম আসে, তাতেও নিশ্চয় দ্বিমত করার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না। ক্রিকেট মাঠে এ দুজন দিনের পর দিন যা করে যাচ্ছেন, তাতে তাদেরকে সত্যিকারের ‘মানিকজোড়’ বললে বোধহয় একটু কমই বলা হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এ দুজনের আবির্ভাব এমন সময়ে, যখন একের পর এক হারের গভীর অন্ধকারময় সুড়ঙ্গ পেরিয়ে বাংলাদেশ কেবল জয়ের পথে একটু একটু হাঁটতে শিখেছে। এরপর এ দুজন এসে বাংলাদেশকে উপহার দিয়ে যাচ্ছেন হিরন্ময় সব মুহূর্ত। সাকিবের অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স এবং তামিমের ব্যাটিংয়ের দ্যুতিতে বাংলাদেশের কাছে একেকটা ম্যাচ জেতা আর বহু কষ্টের ধন হয়ে থাকেনি; বরং পরিণত হয়েছে গৌরবের মুকুটে একটা একটা পালক যোগ করার উপলক্ষ্যে।

ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১১ হাজার রান করার অনন্য কীর্তি গড়েছেন তামিম ইকবাল। একই ম্যাচে সাকিব ছুঁয়েছেন ১০ হাজার রানের মাইলফলক। নিজেদেরকে বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দুই আবিষ্কার হিসেবে প্রমাণ করার জন্য একের পর এক কীর্তি গড়ার পথেই নতুন এই কীর্তিতে নাম লেখালেন তারা।

লাল-সবুজ রঙের জার্সি গায়ে জড়িয়ে তারা যেমন ধন্য হয়েছেন, তেমনি তাদের দর্শনলাভে একেকটা অবিশ্বাস্য গৌরবের আনন্দে মেতে উঠেছে কোটি প্রাণ। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সাফল্যচূড়ার নতুন এক ধাপে আরোহন করলেন তারা।

১১ হাজার রানের গর্বে বুক উঁচু করতে তামিমের লাগলো (১৯ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত) তিন ফরম্যাটের মোট ২৮৭ ম্যাচের ৩৩৩ ইনিংস। এর মধ্যে তামিমকে খেলতে হয়েছে ৫২ টেস্টের ১০০ ইনিংস, ১৭৬ ওয়ানডের ১৭৪ ইনিংস এবং ৫৯ টি-টোয়েন্টির ৫৯ ইনিংস। টেস্টে এই বাঁহাতি করেছেন মোট ৩৮৮৬ রান। আছে আটটি সেঞ্চুরি এবং ২৪টি হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২০৬ রান। তামিম ওয়ানডেতে নয় সেঞ্চুরি ও ৪০ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৫৯৩৪ রান। সর্বোচ্চ ১৫৪ রান। এই দুই ফরম্যাটের তুলনা বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান কিছুটা ম্লান টি-টোয়েন্টিতে। যেখানে ৫৯ ম্যাচে এক সেঞ্চুরি এবং চার হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেছেন ১২৫৭ রান।

এতো কিছু করার পথে তামিম হয়ে গেছেন তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এমন কোনো কীর্তি নেই বিশ্বের আর কোনো দেশের কোনো ব্যাটসম্যানের।

অন্য দিকে ১০ হাজার রানের চূড়ায় উঠতে সাকিবের লাগলো (১৯ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত) ২৯৪ ম্যাচের ৩২৯ ইনিংস। সাকিব টেস্টে ৫১ ম্যাচের ৯৬ ইনিংসে পাঁচ সেঞ্চুরি ও ২২ হাফ সেঞ্চুরিতে করেছেন মোট ৩৫৯৪ রান। ওয়ানডেতে ১৮২ ম্যাচের ১৭২ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫১৮৪ রান। আছে সাতটি সেঞ্চুরি এবং ৩৬টি হাফ সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টিতে ৬১ ম্যাচের ৬১ ইনিংসে ছয় হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে তিনি করেছেন ১২২৩ রান।

ব্যাট হাতে নিজেকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পথে সাকিব বল হাতেও দেখিয়েছেন একের পর এক বিস্ময় জাগানো পারফর্ম্যান্স। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তার মোট উইকেট হয়তো ৫০০ ছাড়িয়ে যাবে চলতি ত্রিদেশীয় সিরিজেই।

একটা সময় ছিলো, যখন আইসিসির বিভিন্ন ক্যাটাগরির সেরা দশে একদমই জায়গা পেতেন না বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার। কিন্তু সাকিব আল হাসান সেই দৃশ্য বদলে দিয়েছেন। তাকে ছাড়া আইসিসির অলরাউন্ডারদের তালিকা তো এখন কল্পনাই করা যায় না!

যে দুজনের পারফর্ম্যান্সের দ্যুতিতে পরিসংখ্যানের পাতয় বাংলাদেশের নাম থাকছে উপরের দিকে এবং অবশ্যই সম্মানজকভাবে, সেই দুজনকে বাংলাদেশের সত্যিকারের ‘মানিকজোড়’ বলাটা বোধহয় একটু কমই হয়ে যায়! ভাষাবিদদের এখন এমন একটা শব্দ বানানো উচিত, যে শব্দে এই দুজনের প্রচণ্ড প্রতাপশালী ক্রিকেট-চরিত্র ফুটে উঠবে দারুণভাবে!