বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কি আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন? তিনি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে জেলে যাওয়ার পর এমন প্রশ্ন এখন ঘরে-বাইরে সর্বোপরি রাজনৈতিক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে।

khaleda in car

এনিয়ে নানা ধরণের অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও দলীয় নেতারা বলছেন, সাজা হওয়ার পর এখন তারা উচ্চ আদালতে যাবেন এবং আপিল করবেন। এ রায়কে আইনি ও রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার কথা বলেছেন তারা।

তবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্যতা নির্ধারিত হয়। সেখানে বলা আছে, কোন ‘নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে’ কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে এবং তাতে দু’বছরের বেশি মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

এক্ষেত্রে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন বা আপিল করলে তা যদি বিচারাধীন থাকে- তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ওপর সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে কিনা জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে তা স্পষ্ট নয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোন দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থিতার মনোনয়নপত্র জমা দিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনি ব্যাখ্যা সাপেক্ষে তার মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন। তবে মনোনয়নপত্র খারিজ হলে ওই ব্যক্তি কমিশনের কাছে আপিল করবেন। কিন্তু আপিল নিষ্পত্তির দীর্ঘ হওয়ায় এর সমাধানে পৌঁছতে পৌঁছতে ভোটগ্রহণ সম্পন্নও হয়ে যেতে পারে।

দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়ার পর সর্বমহলে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, চলতি বছরের শেষ দিকে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাতে কি খালেদা জিয়া অংশ নিতে পারবেন? নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিতভাবে কেউ কিছু বলতে না পারার কারণে এ নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, সাজা নিয়ে খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি পারবেন না তার চায়েও বড় প্রশ্ন হচ্ছে- নির্বাচনের সময় তিনি মুক্ত থাকতে পারবেন কিনা।

তিনি মনে করেন, খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলেও যদি জামিনে থাকেন এবং নির্বাচনী প্রচারাভিযানে অংশ নিতে পারলে এই কারাদণ্ড বিএনপির জন্য নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচকও হতে পারে।

আসিফ নজরুল বলছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো মামলা থাকায় কোন কারণে তিনি জামিন না পেলে প্রচারাভিযানেও অংশ নিতে পারবেন না। তখনকার পরিস্থিতি বিএনপি কতটা কাজে লাগাতে পারবে তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থাকবে। ফলে খালেদা জিয়া নির্বাচনের সময় জামিনে মুক্ত থাকতে পারবে না জেলেই থাকতে হবে- এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়ার অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তেমনি এর সাথে যোগ হয়েছে তাকে ঠিক কত দিন জেলে থাকতে হতে পারে?

আইনজীবীরা জানান, খালেদা জিয়ার রায়ের সত্যায়িত কপি হাতে পাবার পর আপিলের প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। ততদিন পর্যন্ত তাকে বন্দিই থাকতে হবে।

রায়ের কপি কবে পাওয়া যাবে?: সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শাহদীন মালিক বলছেন, এক্ষেত্রে কোন সময়সীমা বাঁধা নেই। তবে শোনা গেছে, সত্যায়িত কপির আগে টাইপ করা কপি আইনজীবীরা হয়তো আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকেই পেয়ে যেতে পারেন। সে অনুযায়ী তারা হয়তো আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝি আপিল দায়ের এবং জামিনের আবেদন করবেন।

তিনি আরও বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় যেমনটা হয়ে থাকে, নারী ও বেশি বয়সের হলে বা সাজা কম (পাঁচ বছর) বলে- এসব বিবেচনায় আমার ধারণা, হয়তো জামিন হয়ে যেতে পারে।

শাহদীন মালিক মনে করেন, এক বা দু’সপ্তাহে ছাড়া পেয়ে গেলে খালেদা জিয়া এক অর্থে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও শুরু করতে পারবেন।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের বেশি সময় সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন- এই হল বিধান। কিন্তু সেই সাজাটি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত যেতে হবে। বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারও সাজা হওয়ার পর তা হাইকোর্টে আপিল হয়ে থাকে, তারপর আবার আপিল বিভাগে আপিল হবে। সে পর্যন্ত গিয়ে সাজা বহাল থাকলে এ বিধান কার্যকর হবে।’

জামিন হলে নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যা নেই: আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘হাইকোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের দণ্ড স্থগিত হয়ে গেলে বা জামিনে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো সমস্যা নেই।’ তিনি বলেন, ‘তবে সেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের সাজা বহাল থাকলে এমপি পদ বাতিল হয়ে যাবে।’

সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন: এই দণ্ডের কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সরাসরি উত্তর দেননি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হননি, সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না। এখন উনার (খালেদা) ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।’

মখা আলমগীরও সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর নির্বাচিত: এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, ‘নিম্ন আদালতের দণ্ড নিয়ে আপিল হলে সেক্ষেত্রে বিচারাধীন অবস্থায় ভোটে অংশ নিতে বাধা নেই।’ নবম সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-১ আসন থেকে এভাবেই জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় তার ১৩ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.