কেন ওয়ানডের সর্বকালের সেরা কোহলি?

দিন তিনেক আগে বিরাট কোহলিকে সম্ভাব্য সেরা প্রত্যয়নপত্রটাই দিয়েছেন মাইকেল ভন। কোহলিকে ওয়ানডের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলে আখ্যায়িত করেছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক। ভারতীয় ব্যাটসম্যানকে ভনের সেরার স্বীকৃতি দেয়াটাও একেবারে অমূলক নয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কোহলির অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে তাকে একদিনের ক্রিকেটের রাজা বানিয়ে দিয়েছেন ভন।

ক্রিকেটের তিন ফরমেটেই কয়েক বছর ধরে হেসে চলেছে কোহলির ব্যাট। ওয়ানডে ক্রিকেটে তো অনন্য তিনি। প্রবল চাপের মুখেও কীভাবে ব্যাট করতে হয় সেটা বোধহয় তার চেয়ে ভালো জানা নেই এই ভুবনের অন্য কোনো ব্যাটসম্যানের। দক্ষতা ও ফিটনেস কাজে লাগিয়ে কোহলি রানোৎসব করেই চলেছেন।

ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডে সিরিজে পাঁচশ রানের মাইলফলক কদিন আগেই ছুঁয়েছেন কোহলি। এই মুহূর্তে ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের নেতৃত্বও দিচ্ছেন তিনি। গত বছরের ফর্মটা এ বছরেও বয়ে এনেছেন কোহলি। র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানটাও সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাচ্ছেন ভারতের অধিনায়ক।

কেন কোহলি ওয়ানডের সেরা ব্যাটসম্যান এর স্বপক্ষে ৫টি যুক্তি দাঁড় করানো হলো:

অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা: সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৬ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কোহলি। ভারতের অধিনায়ক ক্যারিয়ারের সবশেষ ৩৫তম সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরিয়নে, ক্যারিয়ারের ২০৮ তম ম্যাচে। সবমিলিয়ে এই সিরিজে ৫৫৮ রান এসেছে কোহলির ব্যাট থেকে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে কোনো ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এরচেয়ে বেশি রান আগে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। একদিনের ক্রিকেটে কোহলি এতটাই ধারাবাহিক যে তার ব্যাটিং গড় ৫৮.১০! ব্যাট করাটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ বানিয়ে ফেলেছেন কোহলি। তার দুর্দান্ত ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জিততে পেরেছে ভারত।

বিশাল রান তাড়া করার সক্ষমতা: ওয়ানডে ক্রিকেটে কীভাবে বিশাল রান তাড়া করে জিততে হয় সেটা ভালোই জানা আছে কোহলির। তার ৩৫টি সেঞ্চুরির ১৯টিই এসেছে লক্ষ্য তাড়া করার মধ্য দিয়ে। ত্রিশটি ম্যাচে কোহলির সেঞ্চুরি দলের জয়ের রূপরেখাও হয়ে আছে। চাপটা কীভাবে প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দিতে হয় সেটা অনেক ম্যাচেই দেখিয়েছেন কোহলি। এই তো সেদিন ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুড়ে দেয়া ২৭০ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে নেমে কোহলি একাই করেছেন ১১২ রান। তার অধিনায়কোচিত ইনিংসের ওপর ভর করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।

অধিনায়ক পরবর্তী পরিপক্কতা: ২০১৭ সালে এমএস ধোনির কাছ থেকে ফুলটাইম নেতৃত্ব পেয়েছেন কোহলি। দলপতি হওয়ার পর কোহলির রান ক্ষুধা আরো বেড়ে গেছে। ৪৮ ম্যাচে (৪৫ ইনিংস) করেছেন ২,৭৩৯ রান, ব্যাটিং গড় ৮০.৫৫ এবং স্ট্রাইক রেট ৯৮.১০। অথচ এর আগে ১৫৯ ম্যাচে (১৫৪ ইনিংস) ৬,৭২০ রানে কোহলির ব্যাটিং গড় ছিল ৫১.২৯। অধিনায়ক হিসেবে তিনি কতটা দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেন সেটা দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভালোভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। ৩ সেঞ্চুরির দুটিতে তো আউটই হননি কোহলি!

সর্বোচ্চ ফিটনেস লেভেল: যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য ফিটনেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। একজন ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে কোহলি ফিটনেসের সর্বোচ্চ প্রত্যয়নটাই পেয়ে থাকেন। বড় ইনিংস খেলার পথেও তাকে দ্রুত রান নিতে দেখা যায়। চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতে। দ্রুত রান নিতে পারার মানসিকতা এবং সক্ষমতা তাকে এই মুহূর্তে ওয়ানডের সেরা ব্যাটসম্যানের তকমা দেয়ার জন্য যথেষ্ঠ। কোহলির ভেলায় চড়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে দুই ফরমেটের র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে আছে ভারত। এবার কোহলি অ্যান্ড কোংকে ডাকছে টি-টোয়েন্টির শীর্ষস্থানটা। আর একটা ম্যাচ জিতলেই তিন ভুবনের সেরা হয়ে যাবে ভারত।

চাপ মোকাবেলার সক্ষমতা: চাপের মুখেও দুর্দান্ত ব্যাট করাটা এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন কোহলি। লক্ষ্য যত বড়ই হোক না কেন ভড়কে যান না তিনি। বরং দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন ব্যাট হাতে। প্রতিপক্ষ বোলারদের ক্রমেই মানসিকভাবে দুর্বল করে তোলেন তিনি। ফলে অনেক বড় বড় রানের চ্যালেঞ্জও হেলায় ফেলায় জিতে যায় ভারত। এই ফর্ম ও আত্মবিশ্বাসটা অব্যাহত থাকলে খুব দ্রুতই স্বদেশি কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডেতে করা ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ডা ভেঙে ফেলবেন কোহলি। তখন হয়তো তাকে ওয়ানডের সেরা না মানা লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে না।