টি-টোয়েন্টি সিরিজেও ভারতের ইতিহাস

এবি ডি ভিলিয়ার্স বনাম বিরাট কোহলি দ্বৈরথ দিয়েই শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের পূর্ণাঙ্গ সিরিজ। প্রায় দুই মাসের শেষ লড়াইয়ে ইনজুরি দর্শক সারিতে পাঠিয়ে দিয়েছে দুজনকেই। কিন্তু শনিবার অলিখিত টি-টোয়েন্টি ফাইনালটা যেভাবে উত্তেজনার রেণু ছড়িয়েছে তাতে দুই দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানের ইনজুরির খবর নিয়ে পড়ে থাকার সময় কই!

হার দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা অভিযান শুরু করেছিল ভারত। তবু খুশি মনে বাড়ি ফিরতে পারছে সফরকারীরা। টেস্ট হারের প্রতিশোধটা সীমিত ওভারের দুটো সিরিজ দিয়েই যে তুলল ভারতীয়রা! কেপ টাউনে অলিখিত টি-টোয়েন্টি ফাইনালে ৭ রানের নাটকীয় জয়ে সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে নিশ্চিত করে ফেলেছে রোহিত শর্মার দল। একটা ইতিহাসও হয়ে গেল ভারতের। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কখনো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে পারেনি ভারত। আসলে দক্ষিণ আফ্রিকায় আগে ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেওনি। ২০০৬ ও ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি করে টি-টোয়েন্টি খেলে এসেছিলেন ভারতীয়রা। 

বড় মাঠ। উইকেট মন্থর। কেপটাউনে ১৭০ রানের টার্গেট যে কঠিন হয়ে উঠবে সেটা ফাইনালের আগেই বলেছিলেন ফারহান বেহারদিন। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আশঙ্কার লক্ষ্যমাত্রাই দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড় করিয়েছে ভারত। শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মার ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রোটিয়াদের ১৭৩ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয় সফরকারীরা। জবাবে জেপি ডুমিনি ও অভিষিক্ত ক্রিশ্চিয়ান জোঙ্কার ঝড়ের পরও নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেটে ১৬৫ রান তুলতে সক্ষম হয় স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।

নিয়মিত অধিনায়ক কোহলির অনুপস্থিতির পরও ভারত শক্তিশালী সংগ্রহ পেয়েছে ধাওয়ান ও রায়নার ব্যাটে চড়ে। তবে আশা জাগিয়ে অর্ধশতক বঞ্চিত হয়েছেন দুজেই। ৪০ বলে ৪৭ রানের ইনিংসে ধাওয়ানের বাউন্ডারি মোটে তিনটি। ২৭ বলে ৪৩ করা রায়নার মেরেছেন চারটি চার ও ১টি ছক্কা। বিধ্বংসী এই ইনিংসটি তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

ভারতের শক্তিশালী সংগ্রহে অবদান আছে রোহিত শর্মা (১১), মনীষ পান্ডে (১৩), হার্দিক পান্ডেয়া (২১), এমএস ধোনি (১২), ডিনেশ কার্তিকের (১৩) ছোটখাটো ইনিংসগুলোও। ভারতের পতন হওয়া ৭ উইকেটের ৩টি শিকার করেছেন জুনিয়র ডালা, ২ উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন ক্রিস মরিস।

কঠিন লক্ষে ব্যাট করতে রেজা হেন্ড্রিক্সকে হারানোর ধাক্কা সামলে উঠতে ধীর গতিতে এগুতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেট আগলে রাখতে গিয়ে আস্কিং রেটের চাপে পড়তে থাকে প্রোটিয়ারা। দলকে চাপমুক্ত রাখার সম্ভাব্য সব চেষ্টাই করেছেন ডুমিনি। ১৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৯ রান এলেও স্বাগতিকদের জয়ের আশা দেখান ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক।

১৬তম ওভারের শেষ বলে শার্দুল ঠাকুরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে রোহিতের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন ডুমিনি। ৪১ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি। পরে অধিনায়কের দেখানো পথ ধরেই হাঁটলেন অভিষিক্ত জোঙ্কার। ৩১ বছর ৫ মাস বয়সে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সুযোগ পেয়েই জ্বলে উঠলেন তিনি।

অভিষেক ম্যাচে দলকে উপহার দিয়েছেন ২৪ বলে ৪৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। জোঙ্কার ৫টি চার ও দুটি ছক্কার ইনিংসটা শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। ৬ বলে ১৫ রানের হার না মানা যে ছোট্ট ঝড় বেহারদিন তুলেছিলেন সেটাও বিফলে গেছে। তবে ডেভিড মিলার পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে পারলে ম্যাচের ফলটা পাল্টাতে পারতো। এদিন ২৩ বলে ২৪ রান করেছেন মিলার। এর পরিণতি- শ্রীলঙ্কার পর কেপ টাউনে এবার ভারতের কাছেও হার।

জয়ের জন্য শেষ ওভারে ১৯ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। কঠিন সীমকরণটা মেলাতে পারেননি জোঙ্কা ও বেহারদিন। উল্টো ম্যাচের শেষ বলে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে রোহিতের তালুবন্দি হন জোঙ্কা। ভারতীয় পেসারের দ্বিতীয় শিকার তিনি। ভুবনেশ্বরের প্রথম উইকেটটা ছিল ওপেনার হেন্ড্রিক্সের। ধারাবাহিক দ্যুতি ছড়ানোর সুবাদে ভুবনেশ্বর হয়েছেন সিরিজ সেরা।