অথচ খেলারই কথা ছিলো না আশরাফুলের!

ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে পাঁচ ম্যাচের মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্রের এমন পারফরম্যান্সের আলোচনায় ডুবে আছে ক্রিকেটঙ্গন। এর মধ্যেই জানা গেলো, তিনি যে ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি পেয়েছেন, সেখানে তার খেলারই কথা ছিলো না। এক রকম অনুনয় করেই তিনি ওই খেলার একাদশে জায়গা করে নেন।

আশরাফুল এবারের ঢাকা লিগে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি করেন গত রোববার। ওই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় সাভারের বিকেএসপিতে। সেখানে আশরাফুলের দল কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের প্রতিপক্ষ ছিলো অগ্রণী ব্যাংক। ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংক আগে ব্যাটিং করে ২৫২ রান করে। জবাব দিতে নেমে আশরাফুলের অপরাজিত ১০২ রান এবং তাসামুল হকের ১০৬ রানে জিতে যায় কলাবাগান।

এই ম্যাচে আশরাফুল মাঠ ছাড়েন দলকে জিতিয়ে। এর ঠিক তিন ম্যাচ আগে আশরাফুল সেঞ্চুরি হাঁকান প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে। তারপরও অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে তাকে খেলানোর পক্ষে ছিলো না কলাবাগান কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কেনো?

কারণটা হলো, প্রথম সেঞ্চুরি করার পরের তিন ম্যাচের দুটিতেই শূন্য রানে আউট হন আশরাফুল। একটিতে করেন আট রান। বড় ইনিংস খেলার পর আশরাফুলের এমন শীতঘুমে হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক চিরন্তন উপাখ্যানের নাম। এমন অবস্থা তার জাতীয় দলেও হয়েছে বহুবার। ফলে স্বাভাবিক চিন্তা থেকেই কলাবাগান কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ককে একাদশে রাখতে অস্বীকৃতি জানায়।

ম্যাচের আগের দিন রাতে কলাবাগানের কোচ জালাল চৌধুরী আশরাফুলকে ফোন করে বলে দেন যে, পরের ম্যাচে তাকে একাদশে রাখা হচ্ছে না। তাৎক্ষণিকভাবে আশরাফুল কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি। কিন্তু ম্যাচের পর দিন ঠিকই সবার আগে মাঠে হাজির হন তিনি এবং কোচকে অনুনয় করে জায়গা করে নেন দলে।

আশরাফুল কোচকে বলেন যে, এই ম্যাচটাতে যেনো তাকে সুযোগ দেয়া হয়। যদি ব্যর্থ হন, তবে স্বেচ্ছায় একাদশের বাইরে চলে যাবেন, এমন কথাও বলেন আশরাফুল। তার এমন অনুনয় শেষ পর্যন্ত ফেলতে পারেনি কলাবাগান। তাকে জায়গা দেয়া হয় একাদশে এবং আশরাফুল অনেক কষ্টে পাওয়া সুযোগকে কাজে লাগান দারুণ দক্ষতায়।

বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে আশরাফুল প্রতিযোগিতামূল ক্রিকেটের বাইরে ছিলেন পাঁচ বছর। গত বছর থেকে তিনি ঘরোয় পর্যায়ে খেলা শুরু করেছেন। এবার খেলবেন বিপিএলও। কিন্তু লিগে তার বাজে পারফরম দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, আশরাফুল অধ্যায়ের আর কিছু বাকি নেই। কিন্তু প্রায় বলেকয়ে ম্যাচ জেতানো এক সেঞ্চুরি করে আবার আলোচনায় তিনি। লিগে যদি এ রকম আরো কিছু ইনিংস তিনি খেলতে পারেন, বিপিএলে নিশ্চয় তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে। এরপর বিপিএলেও যদি চেনা ঝলকের কিছু দেখাতে পারেন, খুলে যেতে পারে জাতীয় দলের দরজাও। কে জানে, আশরাফুলের স্বপ্ন হয়তো এগোচ্ছে এই পথেই!