দৌলতদিয়ায় সারা বছর ভোগান্তি, ঘাটে শত শত গাড়ির লাইন
- Details
- by ফাহাদুল ইসলাম সানি
রাজধানী ঢাকায় দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল, বাগেরহাটের মতো ২১টি জেলার প্রবেশপথ মনে করা হয় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-রুটকে। বহুল গুরুত্ববহন করা এই নৌ-রুট সারা বছর সমালোচিত হয় ঘাটে মানুষের নানামুখী ভোগান্তির কারণে। প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার ছোট বড় গাড়ি যাতায়াতে ব্যবহৃত হয় এই ঘাট। ২০ থেকে ২৫ হাজার যাত্রী লঞ্চ ও ফেরিতে দৌলতদিয়া থেকে ঢাকায় প্রবেশে ব্যবহার করে নৌ-রুটটি। এই ঘাটে ভোগান্তির পেছনে রয়েছে, দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষের উদাসীন ভূমিকা।
বছরের কখনো বহমান পদ্মার তীব্র স্রোত, কখনো নাব্যতা সংকট বা শীতের কুয়াশা, বিচ্ছিন্ন নৌ চলাচল, বর্ষার শেষ দিকে পন্টুনসহ রেম বেজের ক্ষয়ক্ষতি অথবা ফেরি সংকট এমন অসংখ্য অভিযোগের কথা বলে থাকে কর্তৃপক্ষ। এমন হাজারো অজুহাত সাধারণ মানুষের ভোগান্তির চিত্র পাল্টে দিতে পারছে না। মানুষের মনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে- ভোগান্তির কারণ প্রকৃতপক্ষে নদী নাকি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা।
সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় ২৫০ টি যাত্রীবাহী বাস এবং দুই শতাধিক মালবাহী ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছে। এছাড়াও দৌলতদিয়া টার্মিনালে চার থেকে পাঁচ দিন আগে থেকেই আরো কয়েকশত ট্রাক আটকে আছে। ট্রাকগুলোকে যেমন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়, তেমনি মালিককে গুনতে হয় বড় অঙ্কের লোকসান। দৌলতদিয়া নৌ রুট ব্যবহার করা গণ-পরিবহনগুলোকে সারা বছরই ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই ভোগান্তি কখন কখনো কয়েক ঘণ্টা থেকে পরিণত হয় দিনের পর দিনে। সারা বছর যাত্রীবাহী বাসগুলোকে গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।
ঘাট পরিচালনায় থাকা বিআইডব্লিউটিসি মতে- বর্তমানে মোট ১৫টি ফেরির মধ্যে ১৪টি গাড়ি পারাপার করতে ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৮০ সালে ক্রয় করা ফেরি দিয়ে এখনো সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়। ৩০-৪০ বছর আগের ফেরিগুলোর ইঞ্জিনের ক্ষমতা বহু গুণ হ্রাস পেয়েছে। ৫টি বড় ফেরি এবং ছয়টি ইউটিলিটি ফেরির বেশির ভাগ কার্যক্ষমতা হারিয়েছে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিসি এক কর্মকর্তা।
দৌলতদিয়া ঘাটে সরেজমিন দেখা যায়, সক্রিয় দালালদের প্রভাব চরম পর্যায়ে। দালাল চক্র ৫০০-১৫০০ টাকার বিনিময়ে পিছনের গাড়িকে বাইপাস ব্যবহার করে ফেরিতে উঠতে সহযোগিতা করছে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়ে যায় বহু গুণ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ফেরিতে পার হওয়া যাত্রীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় দালালদের। সক্রিয় দালাল চক্র ফেরিতে পার হওয়া যাত্রীদের থেকে ভিন্ন কৌশলে অতিরিক্ত ৪০- ৫০ টাকা নিয়ে থাকে। কখনো টিকেটের নাম করে বা কখনো সঙ্গে থাকা বস্তার/ বড় কোন ব্যাগের ভাড়ার কথা বলে বাড়তি টাকা আদায় করেন। দালাল চক্রগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এলাকার স্থানীয় নেতারা। তাদের প্রভাব এতো বেশি যে, কোন ধরনের প্রতিবাদ করতে পারে না ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা এমনটাই জানান স্থানীয় বাসিন্দা জামাল উদ্দিন।
বাস ও ট্রাক চালকরা দালাল চক্রের বিষয়ে বলেন, ঘাটে দালাল চক্রটি সক্রিয় কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন ভাগে। একটি গ্রুপ বাস বা ট্রাকের হেলপার/ সুপারভাইজারের সঙ্গে সিরিয়াল দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ রাখে। অন্য একটি গ্রুপ তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে। সব থেকে প্রভাবশালী দালাল কিছু পুলিশের সাথে সু-সম্পর্ক রাখে এবং আর্থিক লেনদেন বা সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে।
অভিযোগ আছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে দালাল, স্থানীয় নেতা, পুলিশ এবং বিআইডব্লিউটিসি উদাসীনতার ফলে ভোগান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাড়ির লাইন লম্বা থেকে আরো লম্বা হচ্ছে অন্য দিকে পকেট গরম করে নিচ্ছে দালাল চক্র ও কিছু অসৎ সরকারি কর্মকর্তা। এসব কারণে ঘাট এলাকায় গাড়ির জটলা দেখা যায়, বাইপাস ব্যবহার করে বিশৃঙ্খল অবস্থান নিচ্ছে বাস ও ট্রাক। ফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
বরিশাল থেকে ঢাকাগামী যাত্রী অনিম আরাফাত বলেন, 'সব ভোগান্তির একটা শেষ থাকে, কিন্তু ঘাটে আমাদের ভোগান্তি সারা বছরের। সকাল ১০টায় এসেছি ঘাটে, এখন প্রায় দুপুর দুইটা বেজে চলছে, হয়তো আরো এক ঘণ্টা সময় লাগবে। বছরের পর বছর এমন অবস্থা থেকে আমাদের পরিত্রাণ একান্ত প্রয়োজন। এখানে কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।'
বেনাপোল থেকে ঢাকাগামী মালবাহী ট্রাক চালক ইলিয়াস খান বলেন, 'ভাই, চার দিন আগে ঘাটে আসছিলাম, আজও হয়তো ওই পারে যেতে পারবো। না পারলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে খেতে হবে, মালিক যা দিয়েছিলো তা চার দিনে শেষ। আমাদের আয় কম আমরা তো আর অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে পারি না, হয়তো সব সময়ই এখানে এমন কষ্ট করেই যেতে হবে।'
সরেজমিন বাস, ট্রাক চালক ও স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়- প্রতিদিন রাতে দালাল, দৌলতদিয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকার পুলিশ এবং কিছু স্থানীয় সাংবাদিক যৌথ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তখন তারা সারা দিনের টাকার ভাগ বাটোয়ারা করেন। স্থানীয় কিছু সাংবাদিক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে অনেক তথ্য মানুষ জানতে পারে না।
দৌলতদিয়া ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিল পুলিশ সার্জেন্ট এস এম পারভেজ সোহান সার্বিক বিষয়ে বলেন, 'ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকলে তেমন কোন ভোগান্তি পোহাতে হয় না। দালালের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রতিনিয়ত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা দ্রুত তার সমাধান করে থাকি।'
তিনি আরো বলেন, 'দালালদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্কের ঘটনাটি সঠিক নয়। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত এস.পি সালমা বেগমের নির্দেশনা মেনে আমরা সৎভাবে কাজ করছি। তবে বাইপাস ব্যবহার করে মানবিক দায়িত্বের কারণে কিছু অ্যাম্বুলেন্স যেতে দেয়া হয়। তাছাড়া অল্পকিছু ভিআইপি সেবা উচ্চ মহলের আদেশে কখনো কখনো দেওয়া হয়।
ফেরির ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা ও ফেরিগুলোর অবস্থা সম্পর্কে জানতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসি নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হক অপুর সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের মূল দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার মো: শফিকুল ইসলাম টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, 'সাধারণত ঘাটে গাড়ি চাপ সামাল দিতে আমাদের তেমন সমস্যা হয় না। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাওয়া ঘাটের কিছু গাড়ি এই ঘাট ব্যবহার করার ফলে চাপ এখন একটু বেশি। তারপরও আমরা মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছি।'
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.