আপনি পড়ছেন

দেশে শিক্ষিত যুবকদের সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। ফলে শিক্ষিত বেকার যুবকদের বড় অংশই ভুগছেন চরম হতাশায়। আবার যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের একটি বড় অংশ হতাশায় ভুগছেন পছন্দের চাকরি না পাওয়ায়। অধিকাংশ চাকরি প্রত্যাশী মেধাবীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘সরকারি চাকরি’। কিন্তু সরকারি চাকরিতে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা থাকায় মেধাবীদের বড় অংশই মূল্যায়িত হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Quota

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস পরীক্ষায় নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা চালু রয়েছে। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, অনগ্রসর জেলার জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আরো ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে।

প্রতিবছরই কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ায় বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থেকে যাচ্ছে। জানা গেছে, ৩৫তম বিসিএসে কোটার প্রার্থী না পাওয়ায় ৩৩৮টি, ৩১তমে ৭৭৩টি, ৩০তমে ৭৮৪টি, ২৯তমে ৭৯২টি এবং ২৮তমে ৮১৩টি পদ শূন্য ছিল। একই ভাবে অন্যান্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও কোটার প্রার্থী না পাওয়ায় অনেক পদ শূন্য থেকে যাচ্ছে। এর ফলে একদিকে নিয়োগ প্রতিষ্ঠান তার চাহিদা অনুযায়ী লোক পাচ্ছে না, অন্যদিকে অনেক চাকরি প্রত্যাশীও চাকরি পাচ্ছে না।

এদিকে সরকারি চাকরিতে মেধার চাইতে কোটার মূল্যায়ন এবং কোটার পদ সংরক্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো- (এক) সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা সুবিধা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, (দুই) কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদে মেধায় নিয়োগ দেয়া, (তিন) চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করার সুযোগ না দেয়া, (চার) কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া, (পাঁচ) সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা ও কাটমার্কস নির্ধারণ করে দেয়া।

আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে গত ৬ মার্চ কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে মেধা তালিকায় থাকা প্রার্থীদের মধ্য থেকে সেসব পদ পূরণ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে এখনো এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা শুরু হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে কোটা সংস্কার কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিদ নিলয় টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘সরকার আমাদের পাঁচ দফার মধ্য থেকে দ্বিতীয় দফা মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য ধন্যবাদ কিন্তু আমাদের মূল দাবিসহ বাকি চার দফা এখনো মেনে নেয়নি। আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই দাবিগুলোর বিষয়ে তার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

শাহিদ বলেন, ‘সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে ১০০ জনের মধ্যে ৫৬ জন কোটায় নেয়ার মাধ্যমে মূলত মেধাকে অবমূল্যান করা হয়। মেধাকে মূল্যায়ন না করে কোন জাতিই টেকসই উন্নয়ন করতে পারে না। তাই কোটা সংস্কার জরুরি। এই আন্দোলনের যারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি। মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্য মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই আমরা এই সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।’

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই এই দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আগামী ২৫ মার্চ আমরা কোটা বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রাজধানীর শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গলায় সার্টিফিকেট ঝুলিয়ে বা বহন করে রাস্তা ঝাড়ু দেব আর ২৯ মার্চ নাগরিক সমাবেশ করব। সেখানে দেশের গুণীজন এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা বক্তব্য রাখবেন।’

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া:

মুক্তিযোদ্ধা কোটা এখন আর থাকা উচিত নয়- অধ্যাপক আনিসুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘কোটা নিয়ে আমার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার। আমার মনে হয় না বর্তমানে ১০ শতাংশের বেশি কোটা থাকা উচিত। আর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের নামে যে কোটা আছে, সেটা এখন আর থাকা উচিত নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের সন্তানরাও এখন বড় হয়ে গেছে। তাই এটা এখন কোনভাবেই চলা উচিত নয়। এটা মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা।’

মেধাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে কোটা রাখলে ফল ভাল হবে না- রাশেদা কে চৌধুরী: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারকে বলেন, ‘কোটা একটি বিশেষ ব্যবস্থা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সাময়িকভাবে রাষ্ট্র এটা গ্রহণ করতে পারে। এই সাময়িক ব্যবস্থা নিতে গিয়ে যদি এটা অনেক বেশি নেতিবাচকভাবে মেধাকে প্রভাবিত করে, তাহলে সেটার ফলাফল ভাল হবে না। তাই এই ব্যবস্থা সংস্কার করার সময় এসেছে। মুক্তিযোদ্ধারা সরাসরি এই সুবিধা পাচ্ছেন না, তাই এটা কমানো যেতে পারে। নারীরা এখন প্রতিযোগীতামূলকভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। তাই নারী কোটা নিয়েও ভেবে দেখা যেতে পারে।’

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা বন্ধ করা উচিত- আবুল কাশেম ফজলুল হক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অনারারি অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘কোটা পদ্ধতির সংস্কার দরকার। বর্তমানে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি আছে, এটা পরিবর্তন করে শতকরা ২০ ভাগে নামিয়ে আনা উচিত। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে আসা উচিত এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ার পরে চাকরি ক্ষেত্রে আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা উচিত হবে না।’

‘আদিবাসী কোটা শতকরা পাঁচ ভাগ থেকে কমিয়ে এক ভাগে নামিয়ে আনা উচিত। কারণ চাকরি ক্ষেত্রে তাদের খুব কম পাওয়া যায়। নারী কোটা ১০ শতাংশের স্থলে আট শতাংশ করা উচিত এবং প্রতিবন্ধী কোটা বাতিল করা উচিত। প্রতিবন্ধীদের কোটা দিয়ে পদ শূন্য না রেখে সরকার বরং তাদের অন্য কোনভাবে সাহায্য করুক। এভাবে কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা সম্ভব এবং ভবিষ্যতে আরো কমিয়ে আনা সম্ভব।’

এক তৃতীয়াংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়- মেজবাহ কামাল: ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল। টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে প্রচুর পরিমাণে বেকার তৈরি হচ্ছে। আমাদের রাষ্ট্র কোন ব্যবস্থা করতে পারছে না এবং সে ধরণের উদ্যোগেরও অভাব আছে। এমতাবস্থায় কোটা ব্যবস্থার কারণে যখন অনেক পদ শূন্য থাকছে, অনেক চাকরি প্রার্থী চাকরি পাচ্ছে না, তখন সামগ্রিকভাবে একটা ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে।’

‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, কোটা ব্যবস্থা কোন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না। কোটাকে সময়ের প্রয়োজনে সংস্কার করা উচিত এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর এটাকে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এই কাজটি অনেকদিন ধরেই হয়নি। ফলে সংকট আরো ঘনিভূত হয়েছে। একটা কোটা কত বছরের জন্য তার একটা সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া দরকার। আর কোটার সুবিধা এক ব্যক্তি যেন বারবার ব্যবহার করতে না পারে। যেমন- একবার একজন কোটা ব্যবহার করে ব্যাংকে চাকরি পেল। ওই একই ব্যক্তি পরের বার একই কোটা ব্যবহার করে বিসিএসে ঢুকল।’

‘এরপরের বার সে আবার কোটা ব্যবহার করে বিসিএস এডমিনে যাচ্ছে! একই ব্যক্তির এই বহুবার কোটা ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা দরকার। আরেকটা বিষয় হল একটা পরিবার থেকে কতজন কোটা সুবিধা নিতে পারবে? আমি মনে করি যে, একটা পরিবার থেকে একজন বড় জোর দুজনের বেশি কোটা ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া বন্ধ করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধা কোটা অর্ধেকে নামিয়ে আনা উচিত এবং সর্বসাকুল্যে শতকরা এক তৃতীয়াংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয় এবং দুই তৃতীয়াংশ মেধা থেকে নেয়া উচিত।’

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.