আপনি পড়ছেন

ঠাঁ ঠাঁ রোদে রিক্সা বা বাসে বসে ঘামছেন আপনি। সামনে বাস, ট্রাক, রিক্সা, সিএনজির দীর্ঘ লাইন। নড়াচড়ার নামটি পর্যন্ত করছে না। দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর গাড়ি যা একটু আগায় তাও প্রত্যেকে আগে যাবার চেষ্টায় একেবারে হযবরল করে ফেলছে। রিক্সা-গাড়ির টুংটাং, প্যাঁ প্যু, খিস্তি-খেউর – একেবারে হতবিচ্ছিরি অবস্থা! এমন সময় অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, আপনার গাড়ির পাশে যে এক হাত পরিমাণ ফাঁকা জায়গা আছে সেই ফাঁকা দিয়ে সাঁ করে বেরিয়ে গেল একটা বাইসাইকেল। বিস্ময়ের ঘোর না কাটতেই দেখলেন আরেকটা গেল... তারপর আরেকটা... তারপর মাঝে মাঝেই যেতে লাগলো।

জ্যামে বসা আপনাকে হতাশায় ডুবিয়ে দিয়ে বাইসাইকেলগুলো চলে গেল সবার আগে। হতে পারে আপনি এই সিগন্যাল ছাড়াতে ছাড়াতে তারা অফিসে বা বাসায় গিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিতে শুরু করেছে!

bd cyclist group

বিপ্লবের শুরু যখন 

দেশে বাইসাইকেল বিপ্লবের শুরু সেই ২০১১ সালের ১৭ মে, চাকুরীজীবী মোজাম্মেল হকের হাত ধরে। মোজাম্মেল হক পান্থপথ থেকে মিরপুর যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় “নষ্ট” করতেন প্রতিদিন। শেষে একদিন বুদ্ধি করে কিনে ফেললেন বাইসাইকেল। তারপর অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন পান্থপথ থেকে মিরপুরের পথটুকু পাড়ি তার দিতে সময় লাগছে মাত্র ২৫/৩০ মিনিট ! সেই শুরু। তার দেখাদেখি আরও অনেকে বাইসাইকেল কিনলেন। তারপর একটা সময় সবাই মিলে বাইসাইকেলকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার মহান ব্রত নিয়ে রাস্তায় নামলেন। ধীরে ধীরে গড়ে উঠল বাংলাদেশে অ্যামেচার সাইক্লিস্টদের সবচেয়ে বড় কমিউনিটি বিডি সাইক্লিস্ট। ফেসবুকে বিডি সাইক্লিস্টের মেম্বার সংখ্যা এখন তিপ্পান্ন হাজারেরও বেশি! একেবারে প্রথম থেকেই দারুন দারুন সব ইভেন্টের মাধ্যমে বিডি সাইক্লিস্ট তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে কাছে টানতে থাকলো ছেলে-বুড়োদেরও।

bd cyclist group one

দুই চাকায় ছুটির দিন

শুক্রবার ছুটির দিনে বেলা ১২টা পর্যন্ত না ঘুমিয়ে উঠে পড়ুন খুব ভোরেই। সকাল ৬:৩০টায় মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আপনার জন্যে অপেক্ষা করবে বিডি সাইক্লিস্টের বন্ধুরা। বাইসাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন ‘বাইক ফ্রাইডে”র উদ্দেশ্যে। প্রতি শুক্রবার আয়োজন করা হয় বলেই এর নাম “বাইক ফ্রাইডে”। মানিক মিয়া এভিনিউ হতে ঢাকা বা ঢাকার আশেপাশেই ২০ থেকে ৩৫ মাইল বাইসাইকেল চালিয়ে আসুন সবার সাথে। হৈ-হুল্লোড়, আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া সবই হবে দুই চাকার উপর। ও হ্যাঁ, যাওয়ার আগে নিজের হেলমেটটা নিতে ভুলবেন না যেন। নিরাপত্তাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া এই ইভেন্টে হেলমেট ছাড়া অংশগ্রহণ করা যাবে না।

গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ

পথের শেষ খুঁজে বের করার দুরন্ত আগ্রহ থাকলে অংশ নিতে পারেন ‘জোশিলা স্যাটারডে’তে। পান্থপথ আর গ্রিন রোড ক্রসিঙের মোড় থেকে প্রতি শনিবার সকাল ছয়টায় শুরু হয় এই ইভেন্ট। তবে এই ইভেন্টটি এক্সপার্ট লেভেলদের জন্য। জোশিলা স্যাটারডের অংশগ্রহণকারীরা শরীরের জোশ দেখাতেই বুঝি পার হয়ে যান ৫০, ১০০, ১৬০, ২০০, ৩০০ এমনকি ৪০০ মাইল পর্যন্ত। সামনে নাকি প্ল্যান আছে ৫০০ মাইল পাড়ি দেয়ার!

bd cyclist group two

জোনাকি পোকা বাইসাইকেল! 

না... না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইট পাথরের ঢাকায় এই জোনাকি পোকাগুলো হল আসলে বাইসাইকেল। প্রতি মাসের ৩য় মঙ্গলবার BDC Nightrider Tuesday 3 নামের এই ইভেন্টটি দূর থেকে চাক্ষুষ করলে বাজি রেখে বলতে পারি একদল জোনাকি পোকার ঝাঁক ভেবে ভুল করবেন আপনি। রাতের ঢাকায় বাইসাইকেলের ফ্রন্ট লাইট এবং লাল লাল ব্যাক লাইট জ্বালিয়ে বিডি সাইক্লিস্ট মেম্বাররা যখন যায় তখন এক দেখার মতো দৃশ্য হয়।

ইচ্ছা থাকলে উপায়ও আছে

বাইসাইকেল চালানো শিখতে চাচ্ছেন, কিন্তু ট্রেইনার পাচ্ছেন না? ওকে, বাইসাইকেল, হেলমেট ও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্রসহ চলে যান ধানমন্ডি আবাহনী মাঠে। কি বললেন, হেলমেট ও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র নেই? কোনো সমস্যা নেই, চলে যান শনিবার সকাল সাতটায় । সেখানে সব আছে। ও... ও কি, কি বললেন, বাইসাইকেলই নাই আপনার? ... ঠিক আছে, তারপরও যান আপনি। বাইসাইকেল, সেফটি কিটস, ট্রেইনিং সব ফ্রিতে দেয়া হবে। একেবারে ফ্রি ! চালানো না শিখে যাবেন কোথায়?

এছাড়াও 64Goodacts, মুণ্ডু চ্যালেঞ্জ, Critical Mass নামের আরও বিভিন্ন অফিশিয়াল ইভেন্ট আয়োজন করে বিডি সাইক্লিস্ট। যেগুলোতে জয়েন করতে হলে আপনাকে চোখ রাখতে হবে গ্রুপের ওয়াল বা ইভেন্ট ট্যাবে। ঘুরে আসতে পারেন বিডি সাইক্লিস্টের ফেসবুক ওয়াল বা অফিসিয়াল ওয়েব সাইট www.bdcyclist.com এ। ইউটিউবে দেখতে পারেন তাদের ভিডিও। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে Be the change, Bike Dhaka  ভিডিও ক্লিপটি দেখার পর আপনিও একটা বাইসাইকেল নিয়ে বের হয়ে পড়বেন!

আপনি আরো পড়তে পারেন

ঘুরে আসুন অ্যাডভেঞ্চার ট্রেইল

মনোমুগ্ধকর গ্লাস বিচ

একশ’ পার্সেন্ট হালাল ভ্রমণ!