‘বাড়ি’ চিনতে ভুল করেছিলেন সাকিব!

চাকচিক্যময় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) সাকিব আল হাসানের অভিষেক ২০১১ সালে। এরপর থেকে প্রতি বছরই আইপিএল খেলেছেন বাংলাদেশি তারকা। টানা সাত বছর ছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সে। আর সেখানে থাকার সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক অনেকবার বলেছিলেন, ‘কলকাতা আমার দ্বিতীয় বাড়ির মতো’। কলকাতা নাইট রাইডার্সে দীর্ঘদিন যাবত খেলার কারণে সেখানে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলেই কথাটা বলছিলেন সাকিব।

কিন্তু আদতে কি কলকাতায় নিজের ‘বাড়ির মতো’ গুরুত্ব পেয়েছেন? হয়তো না। প্রথম থেকেই কলকাতায় পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি সাকিব। ২০১১ সালে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ওই সাত ম্যাচেই ১৩ উইকেট তুলে নিয়ে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। পরের আইপিএলে সাকিবকে মাত্র ৮ ম্যাচ খেলায় কলকাতা। ওই আট ম্যাচেই ওভারপ্রতি ৬.৫০ গড়ে রান খরচ করে ১২ উইকেট তুলে নিয়ে কলকাতার শিরোপা জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। সেবার ব্যাট হাতে করেছিলেন ৯১ রান।

শুধু ২০১১ বা ২০১২ সালে নয়, কলকাতার হয়ে গত ছয় বছরের কোনো বছরই ব্যাট হাতে ঠিকমতো সুযোগ পাননি তিনি। ২০১৩ সালের আইপিএলে নিজের পারফরম্যান্সের ধারেই ব্যাটিং পজিশনটা একটু এগিয়ে নিতে পেরেছিলেন। সেবার ১৩ ম্যাচের ৯টিতে ব্যাট করে ২২৭ রান করেছিলেন সাকিব। বল হাতে ওভারপ্রতি ৬.৬৮ রান খরচ করে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন ১১টি।

মোটামুটি সুযোগ পেয়েছিলেন বলে আইপিএলে এখন পর্যন্ত সাকিবের সবচেয়ে উজ্জল মৌসুম সেটাই। সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল কলকাতা। কিন্তু শিরোপা জেতাতে বড় ভুমিকা রাখলেও পরে আর ঠিকভাবে সুযোগ মিলেনি সাকিবের। 

২০১৫ সালে মাত্র ৪ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। ২০১৬ সালে অবশ্য তাকে ১০ ম্যাচ খেলিয়েছে কলকাতা। তবে সেবার ব্যাটিং পজিশন ছিল অনেক নিচে। বোলিংয়েও পুরো সুযোগ মিলেনি। গতব ছর তো প্রায় পুরো মৌসুমই সাকিবকে বসিয়ে রাখল কলকাতা। পুরো মৌসুমে বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে মাত্র একটা ম্যাচ খেলায় গম্ভিরের কলকাতা।

এবারের নিলামের আগে তাকে ছেড়েই দেয় দলটি। পরে নিলামের টেবিল ঘুরে সাকিব এখন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। আর কলকাতার এই ‘অবজ্ঞা’টাই এখন শাপেবর হয়েছে সাকিবের জন্য। নিলামের পর মনে করা হচ্ছিল তারকায় ঠাসা হায়দরাবাদের হয়ে সুযোগ পাবেন তো সাকিব! কিন্তু বাংলাদেশি অলরাউন্ডারকে মৌসুমের শুরু থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে হায়দরাবাদ।

এক ম্যাচেও সাকিবকে বসিয়ে রাখার চিন্তা করেনি দলটি। এখন পর্যন্ত চলতি আইপিএলে দশ ম্যাচ খেলেছে হায়দরাবাদ, দশটিতেই মাঠে ছিলেন সাকিব। হায়দরাবাদ সাকিবের ব্যাটিংয়েও আস্থা রাখছে। আর পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়াতে চলতি আইপিএলটা দুর্দান্তই কাটছে সাকিবের। ব্যাট হাতে ১৫৮ রান করে ফেলেছেন বাংলাদেশি অলরাউন্ডার। সবচেয়ে বড় বিষয়, মাঝে মধ্যেই দেখা যাচ্ছে দলের বিপর্যয়ে ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ব্যাটিংয়ের চেয়ে বোলিংয়েই বেশি উজ্জ্বলতা ছড়াচ্ছেন সাকিব। দশ ম্যাচে উইকেট তুলে নিয়েছেন দশটি। রশিদ খানের সঙ্গে সাকিবের স্পিনিং জুটিটা জমে উঠেছে দারুণ। হায়দরাবাদ এখন পর্যন্ত দশ ম্যাচ খেলে আটটিতেই জিতেছে। তার বড় কারণ তাদের বোলিং ইউনিটের একসাথে জ্বলে উঠা। আর হায়দরাবাদের এই বোলিং ইউনিটের অন্যতম একজন সাকিব।

এই মুহূর্তে পেছনে ফিরে সাকিবভক্তরা বলতেই পারেন, কলকাতায় ঠিকঠাক মূল্যায়ন পাননি বাংলাদেশি তারকা। ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ বলেছিলেন ঠিকই কিন্তু ‘বাড়ি’ চিনতে হয়তো ভুল করেছিলেন সাকিব!