আসছে আরোও একটি বাংলাদেশি স্যাটেলাইট!

বঙ্গবন্ধু-১ এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন স্যাটেলাইটের জন্য ১০০ ডিগ্রি ও ৭৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে দুটি অরবিটাল স্লটের বরাদ্দ চেয়ে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) কাছে আবেদন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘১০০ ডিগ্রি নিয়ে ভারতও দাবি জানিয়েছে। তবে ৭৪ ডিগ্রির স্লটটি খালি আছে। আমরা দুটির জন্যই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরো জানান, দেশে যেহেতু ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র প্রস্তুত হয়ে আছে তাই বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইটের জন্য খরচ তুলনামূলকভাবে কম হবে।

গত ১১ মে উৎক্ষেপণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। পরদিন বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে নির্ধারিত ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের অরবিটাল স্লটে পৌঁছায় স্যাটেলাইটটি।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুজ্জামান ইউএনবিকে জানান, স্যাটেলাইটটি নিজস্ব অরবিটে পৌঁছানোর পর এখন গাজীপুর ও বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, গাজীপুরে নির্মিত নতুন ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে মূলত বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ জন্য বিদেশি বিশেষজ্ঞরাও চলে এসেছেন।

পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষ হওয়ার পর স্যাটেলাইটটির পূর্ণ কার্যক্রমে যেতে আরো ২-৩ মাস লাগবে বলেও জানান মেসবাহুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র পরিচালনায় ১০৫ জন জনবল নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে এসপিআই। তবে একবারে সম্পূর্ণ জনবল নিয়োগ দেয়া না গেলেও বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেলে তারাই বাকি জনবল নিয়োগের বিষয়টি দেখবে।’

প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, গাজীপুরের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রে এখন বাংলাদেশের ১৮ জন তরুণ কাজ করছেন। পরে আরো ১২ জন যুক্ত হবেন। তাদের সবাইকে ফ্রান্স থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১-এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএসসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, তাদের কোম্পানি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মার্কেটিং চালাতে পারবে বলে ২৪ মে অনুষ্ঠিত বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্যাটেলাইটটি আগামী আগস্ট থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারবে বলেও জানান তিনি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য এবং বাকি ২০টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দেয়া হবে। ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম), টেলিভিশনের সম্প্রচার ও ইন্টারনেট সুবিধাসহ অনেক সেবা পাওয়া যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে। এর ফলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রারই সাশ্রয় হবে না, সেই সাথে বিভিন্ন দেশ থেকে ভাড়া হিসেবে লাভবানও হওয়া যাবে। স্যাটেলাইট ভাড়া দেয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার সাথে কথা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের জন্য বিটিআরসি শুরুতে ১০২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের একটি স্লটের জন্য আইটিইউয়ের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও জাপানসহ ২০টি দেশ ওই স্লটের জন্য আগেই আবেদন করে এবং তারা বাংলাদেশের জন্য ছাড় না দেয়ায় বিকল্প ভাবতে হয়।

এরপর বাংলাদেশ ৬৯ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের আরেকটি স্লটের আবেদন করলে সেখানেও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীনের বিরোধিতার মুখে পড়তে হয়। পরে সময়ক্ষেপণ এড়াতে বাংলাদেশ রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিকের হাতে থাকা ১১৯.১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের স্লটটি ইজারা নেয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় সেই ইজারার চুক্তি করে বিটিআরসি। ইউএনবি।