দল পর্যালোচনা: সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন ডেনমার্কের

বিশ্বকাপের মঞ্চে অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই ডেনমার্কের। কিন্তু আনুপাতিক হারে বিশ্বমঞ্চে ভালোই সাফল্য পেয়েছে ডেনিশরা। মাঝারি শক্তির দল হলেও ইউরোপিয়ান জায়ান্ট দলের তকমা জড়ানো আছে তাদের গায়ে। যে কোনো দলের জন্য শক্ত প্রতিপক্ষ তারা। আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপেও তাদের সমীহ করতে হচ্ছে। এবার দারুণ কিছু করতে মুখিয়ে আছে দেশটি।

শুরুর কয়েকটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল ডেনমার্কের সামনে। কিন্তু হেলায় সুযোগগুলো নষ্ট করেছিল ডেনিশরা। সেটার খেসারত কয়েক দশকজুড়ে দিয়েছে ইউরোপের দলটি। স্বপ্নের বিশ্বকাপে খেলার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত। তবে অভিষেক বিশ্বকাপেই চমক উপহার দিয়েছিল তারা। উঠেছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে। নক আউট পর্বে ওঠার পথে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ৬-১ গোলে চূর্ণ করে গোটা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল ডেনমার্ক। কিন্তু নক আউট পর্বের শুরুতে স্পেনের কাছে ৫-১ গোলের হারে থেমে যায় তাদের স্বপ্নযাত্রা।

এরপরই নেমে আসে বিপর্যয়। টানা দুটি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাধা ডিঙাতে পারেনি ডেনিশরা। ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে তারা ফিরেছে ফেরার মতোই। সেবার তারা আরো বড় চমক নিয়ে হাজির হয়েছিল। প্রথমবারের মতো উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। কিন্তু সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের বিদায় নিতে হয় ব্রাজিলের কাছে।

পরের বিশ্বকাপেও গ্রুপপর্বের বাধা পাড়ি দিয়েছিল ডেনমার্ক। টানা তৃতীয়বারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল ডেনিশরা। কিন্তু সাফল্যের ধারা থেকে এরপরই ছিটকে যায় ইউরোপিয়ান দলটি। শেষ তিন বিশ্বকাপের দুটিতেই জায়গা হয়নি তাদের। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ খেললেও প্রথমবারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে ডেনমার্কের। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখছে দলটি।

এ যাত্রায় দেশটিকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রধান কোচ অ্যাজ হারেইদ। তার অধীনে দুর্দান্ত গতিতে ছুটছে ডেনমার্ক। ২০১৭ সাল থেকে এখন অবধি অপরাজিত আছে দলটি। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে র‍্যাঙ্কিংয়েও বেশ এগিয়েছে তারা। উঠে এসেছে ১২ নাম্বারে। তাদের এই সাফল্যের রূপকার আছেন কয়েকজন। দলে আছেন বেশ কয়েকজন তারকা ফুটবলার।

সম্প্রতি ২৩ জনের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করেছে ডেনমার্ক। কিন্তু এই দলে জায়গা হয়নি ফরওয়ার্ড নিকোলাস বেন্ডনারের। অতর্কিত চোট তাকে অন্তিম সময়ে ছিটকে দিয়েছে বিশ্বকাপ থেকে। তারপরও ডেনমার্কের আক্রমণভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। মধ্য মাঠ ও আক্রমণের মূল ভরসা হয়ে আছেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন। তাকেই বলা হয় ডেনমার্ক ফুটবল দলের মেরুদণ্ড। আসন্ন বিশ্বকাপে হারেইদের মূল অস্ত্র টটেনহামের এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারই।

বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১১টি গোল করেছেন এরিকসেন। যিনি ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার ছিলেন। সেই তিনিই এখন অনেক পরিণত। এরিকসনের ওপর অগাধ আস্থা আছে ডেনমার্ক কোচেরও। তাকে ঘিরেই রণ পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন হারাইদ। সঙ্গে ওয়ের্ডার ব্রেমেন মিডফিল্ডার ডিলান তো আছেই। এই এরিকসেনের সঙ্গে তার রসায়নটা জমে উঠলে যে কোনো দলকে হারাতে সক্ষম ডেনমার্ক।

ডেনিশদের জন্য আশার খবর আসন্ন বিশ্বকাপে তাদের গ্রুপে ফ্রান্স ছাড়া বড় কোনো দল নেই। ‘সি’ গ্রুপে ডেনমার্কের অন্য দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়া ও পেরু। ১৬ জুন ল্যাটিন দল পেরুর বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ডেনিশরা।

অবশ্য বিশ্বকাপের ট্রফি জিততে না পারলেও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অন্য দুই বড় মঞ্চে ঈর্ষণীয় সাফল্য আছে ডেনমার্কের। ১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল ডেনিশরা। তিন বছর পর স্বপ্নের ফিফা কনফেডারেনস কাপেরও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইউরোপিয়ান জায়ান্ট দলটি। এসব কিছুই এখন অতীত হয়ে আছে দেশটির ফুটবলে। এবার সুদিন ফেরানোর স্বপ্নে রাশিয়া বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে ডেনমার্ক।