নিষিদ্ধ হলেও এখনো জনপ্রিয় পলিথিন ব্যাগ

প্রায় ১৬ বছর আগে নিষিদ্ধ করা হয়েছে উৎপাদন ও ব্যবহার। কিন্তু ঘুমন্ত কর্তৃপক্ষের কল্যাণে এখনো জনপ্রিয় বস্তু হিসেবেই দাপটের সাথে বিরাজ করছে বাজার করার পলিথিন ব্যাগ।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০২ সালের জানুয়ারিতে ৫৫ মাইক্রনের চেয়ে পাতলা পলিথিন ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন সেই উদ্যোগ পরিবেশ দূষণ হ্রাসের পথে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

২০০২ সালের এ নিষেধাজ্ঞার সুফল পেতে সরকার ২০১০ সালে আরেকটি আইন করে। পলিথিনের বদলে পাটের ব্যবহারের জন্য জারি করা হয় ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’। কিন্তু আইনের প্রয়োগ না থাকার সুফল নিয়ে এখনো পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রচণ্ড প্রতাপ ধরে রেখেছে।

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার অনেক দেশ কর আরোপের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যাগের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাংলাদেশের মতো কিছু সরকার এক দশকের অধিক সময় আগেই প্লাস্টিক ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ দুর্বল রয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা ও কর আরোপের পরও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যাপক ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনা থেকে গেছে।

অন্যদিকে এশিয়ার আরেক দেশ জাপানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু খুব কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অধিক সামজিক সচেতনতার কল্যাণে পরিবেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে দেশটির দায় তুলনামূলকভাবে কম।

রাজধানীর বারিধারা নতুন বাজার ও গুলশান এলাকার কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, মাছ, মাংস বা মুদির দোকান- প্রায় সব পণ্যে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

নতুন বাজারের ব্যবসায়ী মিল্টন ইউএনবিকে বলেন, পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে পণ্য প্যাক করা সহজ। আর এর উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থাও তাদের কাছে নেই।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ইউএনবিকে বলেন, পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে আইন থাকলেও জনবলের অভাবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। তারপরও নিয়মিতভাবে পলিথিনবিরোধী অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মন্ত্রী আরো বলেন, পলিথিন উৎপাদনের ছোট ছোট কারখানা গজিয়ে উঠার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সবসময় এর উৎপাদন বজায় থাকছে। যে কারণে তাদের সন্ধান ও পাকড়াও করাটা কঠিন হয়ে গেছে।

তিনি জানান, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় পাটের পলিব্যাগ তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে, এটি পলিথিন ব্যাগের কার্যকর বিকল্প হতে পারে।

পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযানের পরিমাণ এতো কম কেন- তা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হলো জনবলের ঘাটতির পাশাপাশি অভিযানের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ নিয়োগে সমন্বয়ের অভাব।

পলিথিন ব্যাগ নগর ও শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আটকে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পলিথিনের ক্ষতির দিকগুলোর বিষয়ে নগরবাসীর মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

সরকারি সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছর এখন পর্যন্ত মাত্র ৮৩টি পলিথিনবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী ইউএনবিকে জানান, এসব অভিযানে ৪২ দশমিক ৫৩ টন পলিথিন ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।

তিনি আরো জানান, দু’একটি কারাখানা ছাড়া বাকি সব পলিথিন উৎপাদন কারখানা অবৈধ এবং তারা সেসব বন্ধ করে দেবেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ ইউএনবিকে জানান, তারা সম্প্রতি বাজার মালিক সমিতির সাথে বৈঠক করেছেন এবং তাদের বাজার করার পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

মালিক সমিতির নেতারা পলিথিনবিরোধী অভিযানে পূর্ণ সহযোগিতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সুলতান আহমেদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারকারীদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা করার এখতিয়ার থাকলেও তা খুব কম প্রয়োগ করা হয়।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, তাদের মন্ত্রণালয় পাটের পলিব্যাগ চালু করতে যাচ্ছে। এই ব্যাগ অনেকটা পলিথিনের মতো হলেও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক নয়। এটি তিন মাসের মধ্যে মাটিতে মিশে যাবে। স্বল্প পরিসরে এর উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং ব্যাপক উৎপাদনের জন্য বড় মেশিন কেনার চেষ্টা চলছে। তা হয়ে গেলে ৩-৪ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা যাবে। যার ফলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ধীরে ধীরে কমে আসবে।

মাসউদুল হক, ইউএনবি।