ফিরে দেখা ১৯৯০ বিশ্বকাপ: জার্মানি-আর্জেন্টিনার বিতর্কিত ফাইনাল
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
গত কয়েকটি বিশ্বকাপ যাবৎ আর্জেন্টিনা দলের কাছে ‘জুজু’ হয়ে আছে জার্মানি। জুজুটা লেগেছিল ১৯৯০ মেক্সিকো বিশ্বকাপ দিয়ে। এরপর জার্মানদের সামনে আর্জেন্টাইনরা যতবারই পড়েছে ততবারই থেমে গেছে তাদের স্বপ্নযাত্রা। বিস্ময়কর হচ্ছে- আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের শেষ যে তিনটি ফাইনাল খেলেছে তিনটিতেই তাদের প্রতিপক্ষ ছিল জার্মানি!
১৯৮৬ বিশ্বকাপে প্রথমবার শিরোপা লড়াইয়ে জার্মানদের হারিয়ে দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। সেই হারের শোধটা জার্মানি তুলেছে পরের বিশ্বকাপেই। হ্যাঁ, ১৯৯০ ফুটবল মহাযজ্ঞের কথাই বলা হচ্ছে। ওই বিশ্বকাপের শেষ লড়াইটা জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। দুই দেশের ‘ব্যাক টুক ব্যাক’ ফাইনাল ম্যাচের সেটাই প্রথম এবং শেষ নজির হয়ে আছে ফুটবলের ইতিহাসে।
তবে জার্মানি-আর্জেন্টিনার টানা দ্বিতীয় ফাইনাল বলে নয়, ইতালি বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে আছে কয়েকটা কারণেই। অতিমাত্রার রক্ষণাত্মক ফুটবল, অঘটন, চমক সর্বোপরি জায়ান্ট দলগুলোর বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া- এসবকিছুই ইতালি বিশ্বকাপের বহুল আলোচিত ইস্যু হয়ে উঠেছিল।
তবে ওই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনটা ঘটিয়েছে ক্যামেরুন। গ্রুপপর্বের ম্যাচে শুরুতেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় আফ্রিকার দেশটি। অভিষেক আসরে ক্যামেরুনের রূপকথা রথযাত্রা থেমেছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
তবে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেও রোমাঞ্চকর একটা ম্যাচ উপহার দিয়েছিল আফ্রিকার দেশটি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অতিরিক্ত ত্রিশ মিনিটের চাপটা আর সামলাতে পারেনি ক্যামেরুন। ২-১ গোলের জয়ে রীতিমতো হাঁফ ছেড়ে বেঁচে যায় ইংলিশরা।
অবশ্য প্রথম ম্যাচে অঘটনের শিকার হলেও ধাক্কাটা আর্জেন্টিনা সামলে নিয়েছিল ভালোভাবেই। ক্যামেরুন ম্যাচের হারের শোকটাকে শক্তিতে রূপান্তর করে ফাইনালে উঠে যায় দিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। কিন্তু স্বপ্নের মঞ্চে আরেকবার ওঠার আগে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয় আলবিসেলেস্তেদের। চোটের কারণে বিশ্বকাপের মাঝপথেই ছিটকে যান আর্জেন্টাইন দুই তারকা ফুটবলার পম্পেদো এবং বুড়িচাগা।
আর্জেন্টাইন সমর্থকদের নির্ভার করল ম্যারাডোনার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স। আগের বিশ্বকাপের নায়ক এবারো জ্বলে উঠলেন। প্রায় একক প্রচেষ্টায় দলকে তুলেছেন সেমিফাইনালে। তবে ফাইনালে উঠতে মূল অবদান রেখেছেন ক্লদিও ক্যানিগিয়া। তার অসাধারণ এক গোলেই ইতালির বিপক্ষে ১-১ গোলে সমতায় ফিরেছিল আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকে স্বাগতিকদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় ল্যাটিন পরাশক্তিরা।
সেমিফাইনালের মতো ফাইনালেও দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ম্যাচের রোমাঞ্চে জল ঢেলে দেন রেফারি। জার্মানির পক্ষে ম্যাচকর্তা বাজান পেনাল্টির বাঁশি। ৮৫ মিনিটে আর্জেন্টিনা রক্ষণদুর্গের সৈনিক পেদ্রোকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান রেফারি কৌডিসেল মিন্ডেস। রেফারি বিতর্কিত ওই সিদ্ধান্তটা না দিলে হয়তো ম্যাচের ফলটা অন্যরকম হতো পারতো।
দশ জনের পরিণত হওয়া আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে উপহার সূচক পেনাল্টি পায় জার্মানরা। সুবর্ণ সুযোগটা হাতছাড়া করেননি আন্দ্রেস ব্রেহম। স্পট কিক থেকে শিরোপা নির্ধারক গোলটি করে বসেন জার্মান তারকা। তাতেই তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জিতে যায় জার্মানি।
রোমাঞ্চকর এই বিশ্বকাপ শুরুর আগে স্বাগতিক দল নির্ধারণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় ফিফাকে। আয়োজক হওয়ার জন্য কোমর বেঁধেই নেমেছিল চার পরাশক্তি ইতালি, ইংল্যান্ড, গ্রিস ও সোভিয়েত ইউনিয়ন। ভোটাভুটির মূল লড়াইটা অবশ্য হয়েছিল প্রথম ও শেষ দলের সঙ্গে। যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ছয় ভোটে হারিয়ে দ্বিতীয়বার স্বাগতিক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় ইতালি।
ভোটের লড়াইয়ের মতো বাছাইপর্বের লড়াইগুলোও ছিল স্নায়ুক্ষয়ী। বাছাইপর্বে ঘটে গেল বেশ কয়েকটা অঘটন। বাছাই প্রতিযোগিতায় অঘটনের শিকার হলো ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, পর্তুগাল এবং পোল্যান্ডের মতো জায়ান্ট দলগুলো। বাছাইপর্বে রূপকথার জন্ম দিয়ে মূলপর্বে প্রথমবারের মতো জায়গা করে নেয় আয়ারল্যান্ড, কোস্টারিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
১৯৯০ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো হচ্ছে- ইতালি (স্বাগতিক), আর্জেন্টিনা (চ্যাম্পিয়ন), ব্রাজিল, কলম্বিয়া, উরুগুয়ে, আরব আমিরাত, মিশর, দক্ষিণ কোরিয়া, ক্যামেরুন, যুক্তরাষ্ট্র, কোস্টারিকা, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড, রোমানিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুগোস্লাভিয়া, নেদারল্যান্ডস ও স্কটল্যান্ড।
আগের সবকটি বিশ্বকাপেই কম-বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখেছে। কিন্তু ইতালির বিশ্বকাপ অনন্য হয়ে উঠল নতুন কৌশলে। প্রায়সব দলই ওই আসরে গোল করার চেয়ে বিপদসীমা আগলে রাখতে বেশি উৎসুক ছিল। প্রতিআক্রমণে গোল করার নেশায় পেয়ে বসেছিল সবাইকে। রক্ষণাত্মক এই কৌশলের কারণে ওই বিশ্বকাপের গোলগড় ছিল স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.