দল পর্যালোচনা: তিউনিশিয়ার সামনে গ্রুপপর্বের দেয়াল
- Details
- by খেলাধুলা ডেস্ক
বিশ্ব ফুটবল মানচিত্রের ক্ষুদ্র একটি নাম তিউনিশিয়া। আফ্রিকান এই দেশটি একটা সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফরাসিদের হাত ধরেই ফুটবলে হাতেখড়ি হয় তাদের। ফরাসিদের শাসন থেকে মুক্তি প্রাপ্তির পর নিজস্ব সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যে গড়ে ওঠে আফিকার উত্তর উপকূলীয় ভূমধ্য সাগরের তীরে অবস্থিত দেশটি। তিউনিশিয়ার এই সংস্কৃতির বড় একটা উপাদান ফুটবল। ধীরে ধীরে দেশটিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে খেলাটি।
ফুটবলে তিউনিশিয়ার সবচেয়ে আনন্দের উপলক্ষটা এনে দিয়েছিল ১৯৭৮ বিশ্বকাপ। দ্য ঈগলরা প্রথমবারের মতো টিকিট পায় বিশ্বমঞ্চে। কিন্তু বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও মূলমঞ্চটা রাঙাতে পারেনি তারা। গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয় আফ্রিকার দেশটি। তবে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়লেও উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না তিউনিশিয়ার।
বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই যে তারা চমকে দিয়েছিল ফুটবল দুনিয়াকে! পিছিয়ে পড়েও উত্তর আমেরিকার পরাশক্তি মেক্সিকোকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল দ্য ঈগলরা। তিউনিশিয়া অঘটনের জন্ম দিয়েছিল পরের ম্যাচেও। শক্তিশালী পশ্চিম জার্মানিকে গোলশূন্য ব্যবধানে রুখে দিয়েছিল তারা। কিন্তু গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলের হারটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য।
অবশ্য তিউনিশিয়ার সূচনা বিশ্বকাপটা হতে পারতো আরো এক যুগ আগে। কিন্তু অল্পের জন্য ১৯৬২ বিশ্বকাপের মূলপর্বের টিকিট পায়নি তারা। তবে দেশটির কয়েকজন ফুটবলারের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছিল আগেই। কারণ উত্তর আফ্রিকার দেশের কয়েকজন ফুটবলারই প্রথম পাঁচটি বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে খেলেছিলেন। অবশেষে ফ্রান্সের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পায় তিউনিশিয়া। ১৯৫৬ সালে ফিফার সদস্যপদও পেয়ে যায় তারা।
বিশ্বকাপের অভিষেক ম্যাচেই ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিল তিউনিশিয়া। আফ্রিকার প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপে জয় পেয়েছিল তারা। কিন্তু স্বপ্নের আসরটা শেষ হওয়ার পরই কোথায় যেন হারিয়ে যায় দ্য ঈগলরা। পরের চারটি বিশ্বকাপে বাছাইপর্বের গণ্ডি পাড়ি দিতে পারেনি তিউনিশিয়া।
উত্তর আফ্রিকার দেশটির অপেক্ষার অবসান ঘটে ১৯৯৮ সালে, ফ্রান্স বিশ্বকাপে। এরপর আরো দুটি বিশ্বকাপ খেলেছে তিউনিশিয়া। কিন্তু টানা তিনটি আসরেই গ্রুপপর্বে বিদায় নিতে হয়েছে তাদের। এরপরই আরেকবার পর্দার অন্তরালে চলে যায় দেশটি। দুই বিশ্বকাপ বিরতি দিয়ে এবার রাশিয়ার ফুটবলযজ্ঞে ফিরছে তিউনিশিয়া। ফেরার এই আসরটা রাঙিয়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আফ্রিকান দেশটি। এ যাত্রায় তাদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে গ্রুপপর্ব।
তিউনিশিয়ার দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার আশাটা একেবারে অমূলক নয়। সম্প্রতি দারুণ ছন্দে আছে তারা। দাপুটে পারফরম্যান্সে গত এপ্রিলে ইতিহাস সেরা র্যাঙ্কিং ১৪ নাম্বারেও চলে এসেছিল দ্য ঈগলরা। যদিও আপাতত সাত ধাপ পিছিয়েছে তারা। কিন্তু র্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবছে না তিউনিশিয়া। তাদের ভাবনায় শুধুই বিশ্বকাপ। নিজেদের দিনে যে কোনো দলকেই হারাতে সক্ষম তারা।
তিউনিশিয়ার ফুটবল বদলে দেওয়ার কারিগর নাবিল মালৌল। যিনি একটা সময় খেলেছিলেন জাতীয় দলের হয়ে। এবার কোচ হিসেবে নিজের জাত চেনাতে চান মালৌল। অবশ্য আট বছর পর তিউনিশিয়াকে বিশ্বকাপে তুলে কিছুটা হলেও নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন প্রাক্তন এই মিডফিল্ডার। মালৌল জানালেন গ্রুপপর্বের বৃত্ত ভাঙার চ্যালেঞ্জটা নিতে প্রস্তুত তার দল।
কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর আগেই একটা দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে তিউনিশিয়াকে। ইনজুরির কারণে আসর থেকে ছিটকে গেছেন ইউসুফ মাসাকনি। তবু অকুতোভয় তিউনিশেয়া। দেশটিকে আশা দেখাচ্ছেন অলিম্পিক মার্শেই মিডফিল্ডার সাইফ এডিনে খাউই। মধ্য মাঠে তার সঙ্গে জুটি জমতে পারে স্টেড রেঁনের তারকা ওয়াহবি খাজরির। কদিন আগে বিদায় নেওয়া মৌসুমটা দারুণ কাটিয়েছেন খাজরি। ২৪ ম্যাচে সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন একের পর এক গোল। খাজরি নিজেও জালের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন নয়বার।
চারটি বিশ্বকাপেই গ্রুপপর্বে বিদায় নেওয়া তিউনিশিয়া এবার বড়কিছুর স্বপ্ন দেখছে এই ত্রয়ীর সৌজন্যে। কিন্তু গ্রুপপর্বেই বড় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তাদের। ‘জি’ গ্রুপে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের দুই পরশক্তি বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড। গ্রুপের অন্য ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ পানামা। তবে ১৮ জুন সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে তিউনিশিয়া।
অবশ্য গ্রুপ প্রতিদ্বন্দ্বী যতই শক্তিশালী হোক না কেন অকুতোভয় দ্য ঈগলরা। তাদের সাহস জোগাচ্ছে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দারুণ পারফরম্যান্স। সম্প্রতি কোস্টারিকাকে হারানোর পর তুরস্ক এবং পর্তুগালের মতো দলকে রুখে দিয়েছে তিউনিশিয়া।
তবে বিশ্বকাপে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারলেও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর আফ্রিকান নেশনস কাপে ২০০৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। তিউনিশিয়া ফিফার অন্য টুর্নামেন্ট কনফেডারেশনস কাপেও খেলেছিল। যদিও ২০০৫ সালে ওই আসরে প্রথম রাউন্ডের বেশি এগুতে পারেনি তারা।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.