মেসির পেনাল্টি মিস, নবাগত আইসল্যান্ডে হোঁচট আর্জেন্টিনার

আইসল্যান্ড এসেছে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে। আর আর্জেন্টিনা দুইবারের বিশ্বজয়ী। অথচ রাশিয়া বিশ্বকাপে এই দুই লড়াইয়ে জিতলো না কেউ! ম্যাচের অধিকাংশ সময় বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার পরও অধিনায়ক লিওনেল মেসির পেনাল্টি মিসের কারণে ম্যাচটি আর্জেন্টিনাকে শেষ করতে হলো ড্রয়ের হতাশা নিয়ে।

ম্যাচের ফলাফলটা দুই দলকে এক জায়গায় নিয়ে থামালেও শুরুতে এগিয়ে ছিলো আর্জেন্টাইনরাই। পুরো ম্যাচে মাত্র সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার দেশকে চাপে রেখেছেন লিওনেল মেসি- আগুয়েরোরা। এমন কি ম্যাচের প্রথম গোলটাও দেয় আর্জেন্টিনায়।

এই ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন ডিয়োগো ম্যারাডোনা। আর্জেন্টিনাকে সর্বশেষ বিশ্বকাপ জেতানো কিংবদন্তির উপস্থিতি মেসিদের অনুপ্রাণিত করবে। এমন বিশ্বাস ছিলো তাদের সমর্থকদের। কিন্তু আদতে তা হয়নি। ম্যারাডোনাকে টিভি স্ক্রিনে বারবার দেখা গেছে অত্যন্ত বিষন্ন মুখে। উত্তরসুরীদের ব্যর্থতার আঁচ কি আগেই পেয়েছিলেন তিনি?

সেটা অবশ্য নয়। কারণ ম্যাচের ১৯ মিনিটে আর্জেন্টিনাই ম্যাচে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। দুর্দান্ত এক গোল করেন সার্জিও আগুয়েরো। বিশ্বকাপে নবম ম্যাচ খেলতে এসে নিজের প্রথম গোল পেলেন তিনি। সে সময় নিশ্চয় ম্যারাডোনা ভুলেও ভাবেননি যে ওই নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে মাত্র চার মিনিট।

চার মিনিট পর, ম্যাচের ২৩তম মিনিটে আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান আলফ্রেড ফিনবোগ্যাসন। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে সাবেক চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে গোল দিয়ে তিনি ঢুকে যান ইতিহাসে। তার দেয়া গোলে সমতা ফেরায় আইসল্যান্ড। এরপর আর কোনো দল গোল করতে পারেনি।

কিন্তু আরো অন্তত দুইটা গোল হতে পারতো এবং দুটিরই মালিক হতে পারতো আর্জেন্টিনা। ৬৪তম মিনিটে আইসল্যান্ডের ডি বক্সে ফাউলের শিকার হন মেসি। অবাধারিতভাবেই একটা পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা। শট নেন মেসিই। কিন্তু আর্জেন্টিনা অধিনায়ক এবং তাদের স্বপ্নসারথীর শট আটকে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হ্যানেস হ্যালডরসন।

মেসির শট ঠেকাতে নিজের ডান দিকে ঝাপ দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক। নিজের আন্দাজে দারুণভাবে সফল হন তিনি। এর মাধ্যমে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে নেয়া সর্বশেষ সাত পেনাল্টির চারটিই মিস করলেন মেসি।

এরপর মেসি পান এক ফ্রি কিক। ডি বক্সের ঠিক বাইরে আবার ফাউলের শিকার হন তিনি। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি কিক তিনি উড়িয়ে মারেন আইসল্যান্ডের গোলবারের উপর দিয়ে।

মেসির এই দুই মিস যতোটা তার জন্য হতাশার ছিলো, তার বেশি হতাশার ছিলো তার দল আর্জেন্টিনার জন্য। গত বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের ক্ষতে প্রলেপ দেয়ার জন্য এবার বিশ্বকাপকেই পাখির চোখ করেছে তারা। সেই উদ্দেশ্যেই এবার রাশিয়ায় পা ফেলেছে আলবিসেলেস্তেরা।

কিন্তু উদ্দেশ্য পূরণের প্রথম পদক্ষেপেই দারুণ এক ধাক্কা খেলো মেসির দল। এই ধাক্কা সামলে পরের দুই ম্যাচে, ক্রোয়েশিয়া নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জিততে হবে তাদের।

আর্জেন্টিনার হতাশার দিকে ইতিহাস সৃষ্টি করলো আইসল্যান্ড। ২০১৬ সালের ইউরোকাপের প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলো তারা। এবার বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি গড় উচ্চতার দলটির সামনে হোঁচট খেলো আর্জেন্টিনা। এই ম্যাচের ফলাফল আর্জেন্টিনার জন্য যতোই হতাশার, বিপরীতে আইসল্যান্ডের জন্য ততোই গর্বের।