আজ থেকে শুরু হচ্ছে ব্রাজিলের ‘হেক্সা’ মিশন

বিশ্বকাপের সবশেষ দুই ম্যাচে ১০ গোল হজম করেছে ব্রাজিল। ঘরের মাঠে সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে সাত গোল হজমের পর নেদারল্যান্ডস ম্যাচে আরো তিনটি। এসর কিছুই এখন অতীত। এই চার বছরে বদলেছে অনেক কিছুই। জন্ম হয়েছে নতুন এক ব্রাজিলের। সেলেকাওদের উন্নতির গ্রাফটা এতোটাই উর্ধ্বমুখি হয়েছে যে, রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার উঠেছে তারা।

১৯৫০ বিশ্বকাপের মারাকানা ট্রাজেডি ৬৪ বছর তাড়িয়ে বেরিয়েছে ব্রাজিলিয়ানদের। সেই দুঃস্মৃতির ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার সুযোগটা গত বিশ্বকাপেই পেয়েছিল সাম্বার দেশটি। দ্বিতীয়বারের মতো সেলেকাওরা আয়োজন করে ফুটবল মহাযজ্ঞ। স্বপ্নের শুরু করা ব্রাজিলের শেষ পরিণতিটা হয়েছিল ভয়াবহ।

বহু যুগের পুরনো মারাকানা দুঃস্মৃতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেলো হরিজন্তে ট্রাজেডি। এখানেই জার্মান বুল্টোজারে পিষ্ট হয়েছিল সেলেকাওরা। ধাক্কাটা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছে ব্রাজিল। নতুন কোচ তিতের ছোঁয়ায় বদলে গেছে সেলেকাওরা। তার দুর্দান্ত রণকৌশলের সুবাদেই রাশিয়ার বিমানের প্রথম টিকিট কেটেছিল ব্রাজিল।

স্বদেশি এই কোচই এখন ব্রাজিলের মানুষদের দেখাচ্ছেন ‘হেক্সা’ (ষষ্ঠ শিরোপা) স্বপ্ন। এই স্বপ্নযাত্রায় টিটের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের নাম নেইমার। তিন মাসের ইনজুরি কাটিয়ে পিএসজি স্ট্রাইকার যেভাবে ফিরে এসেছেন সেটার বিশেষণ এক কথায় দুর্দান্ত। নেইমার গোল করেছেন সেলেকাওদের শেষ দুটি প্রীতি ম্যাচেই।

এই আগুন ফর্ম নিয়েই বিশ্বকাপে ফিরছেন পিএসজি প্রাণভোমরা। পিঠে চোট পেয়ে চার বছর আগে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল তার। নেইমারের ফেরার ম্যাচে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ ইউরোপিয়ান জায়ান্ট সুইজারল্যান্ড। আজ রোস্টভ এরিনায় সুইসদের বিপক্ষের ম্যাচ দিয়েই ‘হেক্সা’ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে ব্রাজিল।

আগের দুটো ম্যাচেই বেঞ্চ থেকে উঠে এসেছেন নেইমার। আজ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেইমারকে শুরুর একাদশেই খেলাতে চান ব্রাজিল কোচ। প্রথম একাদশে থাকছেন গ্রানিত জাকাও। ইনজুরি বেশ ভুগিয়েছে সু্ইজারল্যান্ডের এই তারকাকেও। সুইসদের জন্য স্বস্তির খবর আর্সেনাল তারকার শতভাগ ফিট হয়ে ওঠাটা।

তবে সুইসদের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম জেদ্রান শাকিরি। তার দুর্দান্ত ফর্মের ওপর দাঁড়িয়ে দারুণ ছন্দে আছে সুইজারল্যান্ড। শেষ ২২ ম্যাচের মাত্র একটিতে হেরেছে তারা। ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এর চেয়ে ভালোভাবে প্রস্তুত হতে পারতো না সুইসরা। বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায় নেইমারদের মুখোমুখি হবে তারা। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে মাছরাঙা ও নাগরিক টিভি।

ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ দল থেকে ঝরে গেছেন ১৭ জন ফুটবলার। আগের বিশ্বকাপ খেলা মাত্র ছয়জন আছেন সেলেকাওদের বর্তমান দলে। এদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় সেরা হয়ে উঠেছেন। দলে থাকার কথা ছিল দ্যানি আলভেজেরও। কিন্তু ইনজুরির কারণে ফিকে হয়ে গেছে তার রাশিয়া আসার স্বপ্নটা।

আলভেজের অনুপস্থিতির পরও ব্রাজিলের রক্ষণভাগ চোয়ালবদ্ধ। আছেন থিয়াগো সিলভা, ক্যাসেমিরো, ফিলিপ্পে লুইসের মতো ইউরোপ মাতানো ডিফেন্ডার। সেলেকাওদের রিজার্ভ বেঞ্চও বেশ শক্তিশালী। শুধু রক্ষণই নয়, মধ্যমাঠেও এই বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা দল ব্রাজিল। আর আক্রমণভাগে নেইমারকে ছাড়াও দুর্দান্ত ব্রাজিলকে দেখেছে বিশ্ব। রবার্তো ফিরমিনো, ফিলিপ্পে কুতিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসরা প্রমাণ করেছেন ব্রাজিল এখন আর নেইমার নির্ভর দল নয়।

তিন বিভাগের এই শক্তিমত্তা এবারের রাশিয়া বিশ্বকাপে হট ফেভারিট করে তুলেছে ব্রাজিলকে। সুইজারল্যান্ডকে অবশ্য ফেভারিটের কাতারে রাখা হয়নি, তবে সমীহ করার মতো দল তারা। যে কোনো প্রতিপক্ষকে হারানোর সামর্থ্য আছে তাদের। যেটার প্রমাণ এই মুহূর্তে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে সুইসদের ছয়ে থাকাটা।

এই তালিকায় ব্রাজিলের অবস্থান দুইয়ে। সেরা দশে থাকা দুই দলের লড়াইটা তাই একতরফা হওয়ার সম্ভাবনা কম এটা বলাই যায়। সম্ভাবনাটা অবশ্য উড়ে যেতে পারে। নেইমার-জেসুসদের অবস্থান যে ফর্মের তুঙ্গে! সুইস গোলরক্ষককে আজ যে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে সেটা এক প্রকার নিশ্চিত।

দুই দলের বর্তমান কাঠামো হয়তো আজকের ম্যাচে ব্রাজিলকে এগিয়ে রাখছে। তবে অতীত কিন্তু দুই দেশের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্বকাপের মঞ্চে শেষবার সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রাজিলের দেখা হয়েছিল ঘরের মাঠে। ৬৮ বছর আগে সেই ম্যাচে সেলেকাওদের ১-১ গোলে রুখে দিয়েছিল সুইসরা।

বিশ্বকাপ ছাড়া আরো সাতবার সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছে ব্রাজিল। যেখানে ব্রাজিলের তিনটি জয়ের পাশাপাশি দুটি হারও আছে। আজকের ম্যাচটা তাই সুইজারল্যান্ডের জন্য জয়ের সংখ্যা সমান করার উপলক্ষ। টানা চতুর্থ বিশ্বকাপ খেলতে আসা সুইসরা সেলক্ষ্যেই মাঠে নামবে।