অক্টোবরের মধ্যে ‘নতুন কৌশলে’ কঠোর আন্দোলনে নামবে বিএনপি

দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় প্রশাসনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে বাধ্য করতে আগামী মধ্য সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের শুরুতে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। দলের সিনিয়র নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে ‘নতুন কৌশলে’ আন্দোলন শুরুর আগে বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সরকারকে একটি আল্টিমেটাম দেবেন তারা। আর এই আল্টিমেটামের ঘোষণা কোনো জনসভা বা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেয়া হতে পারে।

বিএনপি নেতারা বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনের কোনো আশা তারা দেখতে পাচ্ছেন না। দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন তারা।

বিএনপির দাবির মধ্যে রয়েছে- খালেদার মুক্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ দলের বিভিন্ন নেতাকর্মীর নামে রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহর। দলটির নেতারা বলেন, সরকার আল্টিমেটামে সাড়া না দিলে ‘নতুন কৌশলে’ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প উপায় থাকবে না।

আন্দোলনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তারা বলেন, দল এখন বিভিন্ন ইউনিট ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন সম্পন্ন করার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ঐক্য গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত ১৩ জুন লন্ডন থেকে দেশে ফেরেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর দলের সিনিয়র নেতাকর্মী ও নীতি নির্ধারকদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বার্তা পৌঁছে দেন তাদের কাছে।

ফখরুলের সাথে এমন একটি বৈঠকে থাকা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা ইউএনবিকে বলেন, তারেক রহমান নির্বাচনের পাশাপাশি কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক গভীর করার ও নির্দেশনা দিয়েছেন। পশাপাশি, কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ভারতসহ প্রভাবশালী অন্যান্য দেশগুলির সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

বিএনপির ওই সিনিয়র নেতা আরো বলেন, তারেক বেশি জোড় দিয়েছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলদের নিয়ে বৃহত্তর জোট গঠন করার জন্য। এদের মধ্য রয়েছে গণ ফোরাম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রীক দল (রব), কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য এবং সিপিবি।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরেন, তারা এখনো বিশ্বাস করেন সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

কিন্তু সরকার এখনো প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করছে। আমাদের নেত্রীকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার চেষ্ট করছে। আমরা এসব হতে দেব না।

ফখরুল বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনায় সরকরকে অবশ্যই খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্তি দিতে হবে এবং নির্বাচন কালীন সরকার গঠন করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিরোধী দল এবং বিভিন্ন সংগঠনকে সাথে নিয়ে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছি। আমরা ভালো সাড়াও পাচ্ছি। আশা করছি ঐক্যবদ্ধ্ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি সরকারকে বোঝাতে পারবো।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাইরে অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে আমরা একটি ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি। এই জাতীয় ঐক্যর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুসারে তারা এখনো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জানান, তারা কঠোর কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন শুরু করার জন্য তাদের দল প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। ‘এই মুহূর্তে রাজধানীতে আমাদের আন্দোলন সফলে গুরুত্বারোপ করছি।

কঠোর আন্দোলন প্রসঙ্গে দুদু বলেন, তারা দেশব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ, হরতাল, ঘেরাও এবং অবরোধের মতো কর্মসূচি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক উপায়েই পালন করেছেন। কিন্তু এ সময়ে আমাদের কর্মসূচি হবে কৌশলে। যাতে অল্প সময়েই ফল পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমাদের দাবি দাওয়ার ভিত্তিতে সরকারের বর্তমান অবস্থান বিবেচনা করে আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অথবা অক্টোবরের শুরুতে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচিতে যাবো।’ ইউএনবি।