ওসিকে পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে দিলো ২ কর্মচারী, সমঝোতার চেষ্টা

ঢাকার শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. আব্দুর রশিদকে পিটিয়ে কাঁধের হাড় ভেঙে দিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীনের দুই কেয়ারটেকার। পার্কিং করা গাড়ি সরানোকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই অভিযুক্ত দুই কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন ওসি মো. আব্দুর রশিদ। ইতোমধ্যে ওই দুই কেয়ারটেকারকে গ্রেপ্তার করার পর সমঝোতার জন্য জামিনও দেয়া হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে থানায় ফিরছিলেন ওসি মো. আব্দুর রশিদ। ঘটনার দিন ভিকারুনন্নিসা নূন স্কুলের ২ নম্বর গেটের সামনে এক বন্ধুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত হয়। এ সময় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে চা পান করতে একটি দোকানে যান। তখন নাজমুল আলম ও মো. মিলনকে দিয়ে এক মধ্যবয়সী নারী পার্শবর্তী ফুটপাত ও রাস্তা পরিষ্কার করাচ্ছিলেন। গাড়ির পাশে অপেক্ষমাণ ওসিকে গাড়ি সরিয়ে নিতে বলা হলে তিনি জানান, চালক চা নিয়ে এলেই গাড়ি দুটি সরিয়ে নেয়া হবে। এ সময় দুই কেয়ারটেকার এসে ওসির পরিচয় জিজ্ঞেস করে পরিচয়পত্র দেখতে চান। পরিচয় নিশ্চিত হয়েও ওসি আব্দুর রশিদকে ‘ভুয়া পুলিশ’ আখ্যা দিয়ে ব্যঙ্গ করতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে ওসির বন্ধুকে অতর্কিত কিলঘুষি মারতে থাকেন নাজমুল ও মিলন। তখন ওসি তার বন্ধুকে বাঁচাতে এ গিয়ে এলে ওসি রশিদকেও রাস্তায় ফেলে লাঠি দিয়ে মাথায় মারার চেষ্টা করেন নাজমুল। তা লক্ষ্য ভ্রষ্ট হয়ে সেই আঘাত কাঁধে লাগলে কাঁধের বাম পাশের হাড় ভেঙে যায়।

এদিকে ওসির বন্ধু সালামকে কিল-ঘুষি মারছিলেন মিলন। একপর্যায়ে আহত ওসিকে টেনেহিঁচড়ে একটি ভবনের পার্কিং ফ্লোরে নিয়ে গেট বন্ধ করে রড দিয়ে পেটান নাজমুল আলম ও মো. মিলন। এ সময় ওসি ও তার বন্ধুর চিৎকারে স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এলে রক্ষা পান তারা।

খবর পেয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে রমনা থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা গিয়ে আহতদের উদ্ধার করেন। এ সময় নাজমুল আলম ও মো. মিলনকেও আটক করা হয়। পরে ওসি আব্দুর রশিদকে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে গত সোমবার ৫ হাজার টাকা মুচলেকা নিয়ে অভিযুক্ত দুই আসামিকে নিজের জিম্মায় জামিনে নেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীন। এ সময় তিনি আদালতকে জানান, নাজমুল আলম ও মো. মিলন তার বাসার কর্মচারী। বাদীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে মামলাটি হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি সমঝোতার চেষ্টা করবেন।

শুনানি শেষে ওই এসপির জিম্মায় দুই কেয়ারটেকারকে জামিন দেন ঢাকা সিএমএম আদালত। এর আগের দিন ওই দুজনের জামিনের আবেদন করা হলেও পুলিশের আপত্তির কারণে জামিন দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ‘আমি মামলা করেছি। আসামিরা সোমবার জামিন পেয়েছেন বলে শুনেছি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

তবে এ ব্যাপারে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার শামীমা ইয়াসমীনের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।