কৃষকের সাফল্য: ৩০ টাকা পুঁজিতে আয় ৪৫ হাজার টাকা!

খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার বর্গাচাষী সুরশ্বের মল্লিক। ৩০ টাকার পালং শাকের বীজ কিনে চাষ করেন বর্গা জমিতে। আর সেই ৩০ টাকার পুঁজি থেকে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে আয় করেছেন ৪৫ হাজার টাকা। এভাবে বর্গা জমিতে ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দকাঠি গ্রামের এক সময়ের হতদরিদ্র কৃষক পরিবর্তন করেছেন নিজ ভাগ্য। সেইসঙ্গে আরো অনেক কৃষকেই দেখিয়েছেন ভাগ্য ফেরানোর পথ।

এক সময় নিজের বসতভিটাটুকুই ছিল সুরেশ্বর মল্লিকের। কয়েক বছর আগেও অন্যের জমিতে কামলা (দিনমজুর) দিয়ে সংসার চালাতো। আর এখন গড়েছেন নিজের পাকা বাড়ি। পেয়েছেন জাতীয় বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারও।

শুরুতে বাড়ির পাশের একখন্ড (৫০ শতক) পতিত জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন সুরেশ্বর মল্লিক। এরপর থেকে থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই জমিতে বিভিন্ন রকমের ফসল ফলিয়ে এলাকায় চমক সৃষ্টি করছেন তিনি। 

কৃষক সুরেশ্বর মল্লিক জানান, এক বছরের জন্য জমি বর্গা নেয় কৃষক মল্লিক। জমির মালিককে বছরে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। এ জমিতে মাত্র ৩০ টাকার পালং শাকের বীজ বপন করেন তিনি। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মাথায় স্থানীয় পাইকারদের কাছে ৪৫ হাজার টাকায় ক্ষেতের সব শাক বিক্রি করেছেন।

একজন বর্গাচাষী হিসেবে কৃষি উদ্যোক্তায় ২০১৭ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারও পেয়েছেন। তার দেখাদেখি উপজেলার অনেকেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

সুরেশ্বর মল্লিক বলেন , আমি আগে অন্যের জমিতে কাজ করতাম। এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করি। এলাকার গরিব বেকার মহিলাদের আমার ক্ষেতে কাজে লাগাই। যাতে তারা কিছু আয় করতে পারে।

তিনি বলেন, ৪৫ দিনের মাথায় এই আয় হয়েছে। বছরের বাকী দিনে আরও ফসল ফলাতে পারবো এবং আয় করতে পারবো।

কৃষি অফিস জানায়, পালং শাক একটি লাভজনক চাষ। এতে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। বীজ বপনের পর কয়েকদিন ঠিকমতো পানি দিতে হয় এবং আগাছা পরিষ্কার রাখতে হয়। এতেই ফলন হয় ভালো।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম জানান, কৃষকরা যাতে অল্প জমিতে বেশি লাভ করতে পারে এবং কীটনাশক ব্যবহার না করে আমরা সে ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। সুরেশ্বর একজন বর্গা চাষী। সে প্রথমদিকে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতো। আমাদের পরামর্শে সে এখন জৈব সার (ভার্মি কম্পোস্ট) ব্যবহার করে। তার বাড়িতেই আমরা কৃষক স্কুল মাঠ (স্থানীয় কৃষকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) তৈরি করেছি।

এছাড়া ‘উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে উপজেলার অনেক কৃষকই সাফল্য অর্জন করছে বলেও জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা।

চাষী মো. ইমরান হোসেন মোড়ল জানান, সুরেশ্বরকে দেখে এলাকার অনেকেই চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে। নিজ জমি ছাড়াই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন। সে এখন আমাদের অনেকের কাছে অনুসরণীয়।

শেখ দিদারুল আলম, ইউএনবি।