সন্ধ্যায় ‘বহুল প্রতিক্ষীত’ সংলাপ, থাকছে যেসব প্রস্তাব...

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বহুল প্রতিক্ষীত সংলাপ শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সরকারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এ বৈঠকে সরকারি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী জোটের নেতৃত্বে থাকছেন ড. কামাল হোসেন।

জানা গেছে, সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তাদের পেশকৃত সাত দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্য তুলে ধরা হবে। এ সব দাবি ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে সময়ের প্রয়োজন, তফসিল ঘোষণার পর তা আর সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে তফসিল ঘোষণার তারিখ পেছানোর প্রস্তাব।

ঐক্যফ্রন্টের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সংলাপের এজেন্ডায় রয়েছে সাত দফা দাবি। এরমধ্যে কয়েকটি দাবি সংবিধানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ সব দাবি বাস্তবায়ন করতে অধিবেশন ডেকে সংবিধান সংশোধনও করতে হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সংলাপে জোর দেয়া হবে।’

নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। কিন্তু সরকার এই কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত তফসিল ঘোষণা করাতে চায়। সংলাপের এজেন্ডায় এটি না থাকলেও আপত্তি জানানো হবে।’

এদিকে বুধবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। এরপরই তফসিলের বিষয়ে নড়েচড়ে বসে ঐক্যফ্রন্ট।

এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আগে সংলাপ, পরে তফসিল। আমাদের দাবিগুলোর সঙ্গে জনগণের সম্মতি রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ সব দাবির ব্যাপারে সরকার ইতিবাচক সাড়া দেবে। আজকের সংলাপে আলোচনার সূত্রপাত ঘটবে।’

সংলাপের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাওয়ার পর আলোচনার এজেন্ডা ঠিক করতে মঙ্গলবার বৈঠকে মিলিত হয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। ওই বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র আ স ম আব্দুর রব বলেছিলেন, ‘এ সংলাপে সাত দফাসহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে। জাতি আশা করে, এর মাধ্যমে একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।’

ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা দাবি:

১) অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।

২) গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

৩) বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

৪) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মত প্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ সকল কালো আইন বাতিল করতে হবে।

৫) নির্বাচনের ১০ দিন আগে থেকে নির্বাচনের পর সরকার গঠন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত করতে হবে।

৬) নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে ভোট কেন্দ্র, পোলিং বুথ, ভোট গণনা স্থল ও কন্ট্রোল রুমে তাদের প্রবেশের উপর কোন প্রকার বিধি-নিষেধ আরোপ না করা। নির্বাচনকালীন সময়ে গণমাধ্যমকর্মীদের উপর যে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে।

৭) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও কোনো ধরনের নতুন মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত রোববার সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর চিঠি দেন ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন। পরদিন আলোচনায় সম্মতির কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এরপর সংলাপের জন্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসায় পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।

একই দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বৈঠকের আমন্ত্রণ চেয়ে চিঠি দেন যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তা গ্রহণ করে ওইদিন রাতেই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র বি চৌধুরীর বাসায় পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।

এদিকে সংলাপ চেয়ে জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের চিঠির ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংলাপ চেয়ে লেখা ওই চিঠির উত্তরে প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাদের গণভবনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।