ভোট দিতে আগ্রহী হিজড়া ‘পাখি’, আছে দাবিও

হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা বাংলাদেশের ভোটার। তাদেরও আছে ভোটাধিকার। দেশের অন্য ভোটারদের মত তৃতীয় লিঙ্গের ভোটাররাও ভোটাধিকার প্রয়োগে আগ্রহী। এই রকম একজন পাখি বেগম। আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিবেন। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার ভোটার তিনি।

বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকায় একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা হয় তৃতীয় লিঙ্গের পাখির সাথে। জানালেন, ভোট দেওয়ার জন্য নিজ জম্মস্থান টেকনাফে যাবেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগরীর আমবাগান এলাকার একটি হিজড়া গ্রুপের সদস্য পাখি। প্রতি বুধবার সাংবাদিক পাড়া খ্যাত জামাল খান সড়ক ও সংলগ্ন চেরাগী পাহাড়ে টাকা তুলতে আসেন। দোকান প্রতি দশ টাকা করে নিয়ে যান। আচরণে যথেষ্ট মার্জিত পাখি বেগম এই এলাকায় অনেকের কাছেই পারিচিত।

ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে পঞ্চম শ্রেণি অবধি পড়াশুনা করা পাখির সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘ভালো মানুষ দেখে ভোট দিব। যিনি ভালো মানুষ, মানুষের কাজে আসেন, উপকার করেন এই রকম প্রার্থীকেই ভোট দিবো।’

আলাপচারিতায় পাখি আরো জানালেন, ‌‌‌‍‘পাচ বছরের পর পর ভোট আসে। একটা মাত্র ভোট, ভেবে চিন্তে ভোট দিবো। যারা যারা ভোটার আছে সবাই নিজ নিজ এলাকায় চলে যাবে ভোট দেওয়ার জন্য, ভোটে গন্ডগোল হলে সবাই যে পরিস্থিতি বেছে নেয় আমরাও তাই কারবো। ভোটেতো গন্ডগোল হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে মারামারি হয়, এক পক্ষ জিতলে অন্যপক্ষ রেগে যায়।’

যারা নির্বাচিত হবে তাদের কাছে চাওয়া পাওয়া কী, এমন প্রশ্নের উত্তরে পাখি বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতিবন্ধী হিজড়া, সমাজে থাকতে পারিনা, আমাদের পরিবারকে সবাই হেয় করে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও বাবা-মা আমাদের কাছে রাখতে পারেনা। হিজড়াদের সাথে থাকি। মানুষের কাছে যায়, তারা দশ-পাঁচ টাকা দেয়। এতে সুখে আছি, কিন্তু এই জীবন আমরা চাইনা। কাজ কর্ম করতে চাই, সরকার আমাদের জন্য সেই ব্যবস্থা করবে এটাই আমাদের চাওয়া।’

পাখি বেগম জানান, চট্টগ্রামে তাদের নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় সাতশ হিজড়া আছে। তাদের অধিকাংশই ভোটার। সে নিজেও কয়েক বছর আগে ভোটার হয়েছে।

বাংলাদেশে হিজড়াদের সংখ্যা কত সেটির সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান কোথাও নেই। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে এই সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো হতে পারে। 

তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে ২০১৩ সালে নীতিমালায় অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর থেকে পাসপোর্ট করাসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে নিজস্ব পরিচয় দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় এ জনগোষ্ঠীর। এ বছরই ভোটার তালিকাতেও স্বীকৃতি পেয়েছে তারা।

হিজড়া জনগোষ্টিকে নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা বন্ধন মানব উন্নয়ন সংঘের আলী আহমদ হারেছ জানান, চট্টগ্রামের অনেক হিজড়া এবছরই প্রথমবারের মত জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদান করবে। ২০১৩ সালে সরকারি নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পর অনেক হিজড়া স্ব-প্রণোদিত হয়ে ভোটার হয়েছেন।

তবে, চট্টগ্রামের বিভাগীয় নির্বাচনী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জান জানান, ভোটার তালিকায় তৃতীয় লিঙ্গ বলে আলাদা কিছু নেই। যে নিজের লিঙ্গের যে পরিচয় দিতে আগ্রহী হয়েছেন সেই পরিচয়ই লিপিব্দ্ধ করা হয়েছে।

কমিশন সব ভোটারের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করবে, কে কোন লিঙ্গের কোন বর্ণের তার কোন আলাদা হিসেব নেই বলেও জানান নির্বাচনী কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো হিজড়ারা ভোটাধিকার পেলেও ভোটার আইডি কার্ডে জেন্ডার নির্ধারণ করা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল তাদের। তবে এবার কোন ঝামেলা ছাড়াই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন তারা। 

অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে অনেক আগেই থার্ড জেন্ডারভুক্তদের নিজ পরিচয় স্বীকার করে ভোটাধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নারী পুরুষদের মতো স্বাভাবিক অধিকার দেয়া হয়েছে।