খালেদা: সাজা দিলে দিয়ে দেন, আমি আর আসব না

আদালতের ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘সাজা দিলে দিয়ে দেন। তবুও আমি এ আদালতে আর আসব না।’ তিনি আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে নাইকো দুর্নীতি মামলার হাজিরা দিতে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে বিচারকের কাছে এ অসন্তোষের কথা জানান।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘কারাগারকে আদালত বানাইছেন, জায়গা দিতে পারেন না আইনজীবীদের গেট থেকে ফিরে দেন। আমার যে কজন আইনজীবীকে আসতে দেন তারা বসতে পারে না। আপনারা যা সাজা দেয়ার দিয়ে দেন, তবুও আমি এ আদালতে আর আসব না।’

এরআগে হুইল চেয়ারে করে আদালতে আনা হয় খালেদা জিয়াকে। এ সময় তার পরনে ছিল সাদা শাড়ি ও গোলাপী ওড়না। হুইল চেয়ার ঠেলে আদালত কক্ষে খালেদা জিয়াকে প্রবেশের সময় আইনজীবী ও নিরাপত্তারক্ষীদের ভিড়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন তিনি।

বিচারক এজলাসে বসতেও কিছুটা দেরি হয়। এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে মামলার বিষয়ে আলোচনা করেন।

আদালত শুরু হলে মওদুদ আহমদ বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি সংকীর্ণ এই জায়গা থেকে আদালত সরিয়ে নেন। এখানে বিচারকার্য পরিচালনার কোনো পরিবেশ নেই।’

এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, ‘আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের এত লোক। কিন্তু আমার সব আইনজীবীকে ঢুকতে দেয়া হয় না। কারণ হিসেবে বলা হয় জায়গা কম। আমি বলতে চাই এ সংকীর্ণ জায়গায় কোর্ট চলতে পারে না।’

‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই কোর্টের জায়গা যতি পরিবর্তন না হয়। তাহলে আমি আর আসব না। যা সাজা দেয়ার আপনারা দিয়ে দেবেন।’- যোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার লোকজন আসতে পারে না। এ অভিযোগ আমি আগেও দিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ জবাবে আদালত জানান, ‘আগামী কোর্টে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা হবে।’

সঙ্গেসঙ্গেই খালেদা জিয়া বলেন, ‘আদালত শুধু ব্যবস্থা করার কথা বলে, কিন্তু কিছুই হয় না।’ উত্তরে বিচারক বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’ এরপর আদালতে শুনানি হয় এবং এফবিআইয়ের প্রতিবেদন ও আসামীপক্ষের দরখাস্ত আদালতে নথিভুক্ত করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, কানাডীয় প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।

এ মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

প্রসঙ্গত, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দণ্ড নিয়ে পুরনো ঢাকার পরিত্যাক্ত কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।