ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাঠেই লুটিয়ে পড়লেন মা...

মাঠে তখন দর্শকদের ভিড়। প্রতিযোগীরাও মাঠের মাঝে জটলা করে আছেন। সবার মধ্যেই একটা আনন্দ আর উত্তেজনা কাজ করছে। হঠাৎই মাঠের এই আনন্দভাবটা কেটে গেলো এক মায়ের করুণ আর্তিতে। বিলাপ করে নিজের ছেলের হত্যার বিচার চাইতে চাইতে মাঠের মাঝেই লুটিয়ে পড়লেন ওই মা। সবার দৃষ্টি তখন লুটিয়ে পড়া ওই দেহটার দিকে।

ঘটনা গতকাল সকাল নয়টার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এমন সময় ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাঠে ঢুকে পড়েন ওই মহিলা।

জাহেদা আমিন চৌধুরী নামের এই মহিলা হচ্ছেন ২০১৬ সালে খুন হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা। তিনি নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের কর্মচারী।

অন্য সব কর্মচারীদের মতো তিনি নিজেও খেলার দিন মাঠে হাজির হয়েছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। কিন্তু যখনই প্রতিযোগিতা উপলক্ষে প্রকাশিত স্যুভেনিয়রে ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামি মোহাম্মদ আলমগীর টিপুর ছবি দেখলেন তখনই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি।

স্যুভেনিয়র হাতে সাথে সাথেই ছুটে যান তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি আনোয়ারের কাছে। গিয়ে তার কাছে আলমগীর টিপুর ছবিসংবলিত শুভেচ্ছাবাণী ছাপানোর কারণ জানতে চান। কিন্তু কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো জাহেদা আমিনের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন আনোয়ার।

এরপর নিজেকে সামলাতে না পেরে মাঠের মধ্যেই বিলাপ করতে থাকেন দিয়াজের মা। একসময় মাঠেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে নগরের জিইসি এলাকার বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথম ময়নাতদন্তের পর পুলিশ দিয়াজকে হত্যা করার আলামত পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয় দিয়াজের। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের পর তাকে হত্যা করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এরপর ওই বছরের ২৪ নভেম্বর জাহেদা আমিন বাদী হয়ে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ১০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন।

ছেলে হত্যার বিচারের দাবিতে একাধিকবার কর্মসূচি পালন করেছেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন। কিন্তু প্রত্যেকবারই তাকে শুধু আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু ছেলে হত্যার বিচার পাননি।