'গণরুম ব্যবস্থা ও আবাসন সংকট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিশাপ'

আবাসিক হলগুলোতে বিদ্যমান গণরুম ব্যবস্থা ও আবাসন সংকটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিশাপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের প্রধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম। মঙ্গলবার, ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হল অডিটরিয়ামে আয়োজিত অভ্যন্তরীণ বার্ষিক ক্রীড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

স্যার এ এফ রহমান হলের প্রধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম

হলের এক একটি কক্ষে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে থাকে সে সম্পর্কে তিনি দুঃখভরে উল্লেখ করেন। পিতা-মাতার পরিচয়হীন বস্তিতে জন্ম নেয়া শিশুরা যেভাবে অনাদরে যেখানে সেখানে বড় হয়, অনেকটা সেই অবস্থার সাথে মিলিয়ে তিনি বলেন, ‘যেখানে  ম্যাক্সিমাম ৮ জন থাকতে পারে, সেখানে ৩০-৪০টা ছেলে কিভাবে রাত্রি যাপন করে, কিভাবে নিঃশ্বাস নেয়? এদের (ছাত্রদের) তো পৈত্রিক পরিচয় আছে। এদের ফ্যামিলিতেও আভিজাত্য আছে। এরা জীবনে এভাবে (গণরুমে) ঘুমিয়ে বড় হয় নাই। আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর আমরা এগুলো তাদেরকে শেখাচ্ছি যে, বস্তির মত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কিভাবে ঘুমায়। এর থেকে উত্তরণ সম্ভব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এর থেকে উত্তরণ সম্ভব।’

তার এই বক্তব্যের পর ছাত্ররা মুহুর্মুহু করতালি দিতে থাকলে কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু স্লোগানের ওপর দেশ টিকবে না, জাতি টিকবে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক মোঃ কামাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, মাননীয় উপাচার্যের নেতৃত্বে আপনারা প্রশাসনে সর্বোচ্চ জায়গাতে রাতদিন যে সাধনা করছেন এটিকে আরো একটু ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবর্তন করতে পারি, চ্যালেঞ্জ নেই তবে এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।’

বিদ্যমান ব্যবস্থার সমালোচনা করে সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন, ‘এইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছেলেরা, বাংলাদেশের মেধাবী ছেলেরা নিগৃহীত, অবেহেলিত, মানবেতর জীবন-যাপন আমাদের শিক্ষকদের সামনে করতে পারে না। আমরা বলি না, দেখি, দেখে থাকি, বলি না। এসএম হলে (সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে) ১৬০ জন বারান্দায় থাকেন। বৃষ্টি আসলে ভেজেন। তাদের দেখার কেউ নাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে যে পরিমাণ সিট রয়েছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সেই বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি প্রস্তাব রাখেন, ‘আমরা হয় ছাত্র কম নেব (ভর্তি)। তা নাহলে যাদেরকে নেব তাদের অন্তত মিনিমাম মানবিক জীবন যাপনের একটা জায়গা করে দেব। যাতে সে লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হতে পারে। এই চ্যালেঞ্জটা নিতেই হবে। আপনারা সিদ্ধান্ত নিন। ইভিনিং শিফট (সান্ধ্যকালীন বাণিজ্যিক কোর্স) করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার শিক্ষার্থীদের জীবনকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে স্যার আপনারা পদক্ষেপ নিন।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শাখায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের উপদেষ্টা পরিচালক অধ্যাপক ড. এম জিয়াউল হক মামুন, হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার।