জামায়াতকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির!

গত কয়েক দিন ধরেই জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এর মধ্যেই এ ইস্যুতে নড়েচড়ে বসছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটে দুই দশকের সঙ্গী জামায়াতকে আর সাথে রাখতে চাইছে না দলটি। এ ব্যাপারে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে। এদিকে জামায়াতও ২০ দলে না থাকার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে বলে খবরে প্রকাশ।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে বিএনপি তাদের আগেকার নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো পুনর্মূল্যায়ন করছে। এর অংশ হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শে ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে এখন আর জাতীয় বৃহত্তর ঐক্যে আর কোনো বাধা থাকবে না।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত ছিল, জামায়াত নিজে থেকে জোট ছাড়লে আপত্তি নেই, তবে বিএনপি ঘোষণা দিয়ে তাদের ছাড়বে না। ফলে রাজনৈতিক কারণেই জামায়াত ত্যাগের ঘোষণা আপাতত আনুষ্ঠানিকভাবে দিবে না বিএনপি।

তবে এ ব্যাপারে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করলে জোট থেকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত অনানুষ্ঠানিকভাবে জানাবে বিএনপি। দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, জামায়াত ইস্যুতে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের হাইকমান্ডের বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। এরপরই জামায়াতকে ২০ দলীয় জোটের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

জানা গেছে, সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভায় একাদশ সংসদ নির্বাচন এবং দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একাত্তরের ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং জামায়াতে ইসলামী নামে রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তুলনামূলক নতুন নেতৃত্বের দাবির মুখেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু নির্বাহী পরিষদের এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেনি জামায়াতের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম মজলিশে শুরা কমিটি। সিনিয়রদের দ্বারা গঠিত কমিটির বেশিরভাগ সদস্য মনে করেন, দলটির ২০ দলীয় জোটে না থাকা এবং আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়া উচিত।

এর মধ্যেই গত শুক্রবার লন্ডনে অবস্থানরত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেন। জামায়াতের আমির মকবুল আহমদের কাছে লেখা চিঠিতে পদত্যাগের পেছনে দুটি কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি।

আব্দুর রাজ্জাকের চিঠিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতা করার জন্য জনগণের কাছে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ ছিলো, কিন্তু দলটি তা চায়নি। তাছাড়া একবিংশ শতাব্দীর পরিবর্তিত বাস্তবতায় মুসলমান দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে সংস্কার আনতে পারেনি দলটি।

এর পরদিন শনিবার নিজের ফেসবুকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য মজিবুর রহমান মঞ্জু জানান, তাকে জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতেই জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমদের পক্ষ থেকে তাকে এ কথা জানানো হয়।

জানা যায়, বর্তমান জামায়াতের মধ্যে দুইটি ধারা বিদ্যমান রয়েছে। একটি হচ্ছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করায় জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সংস্কার এনে নতুন নামে দল গঠন করার পক্ষে। বিশেষ করে দলটির নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব এই পক্ষে রয়েছে। অন্যটি হচ্ছে, দল যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে এবং তারা অতীতের কোনো ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার পক্ষে নন। প্রবীণ নেতারা এই পক্ষে রয়েছেন।

আব্দুর রাজ্জাক ও মজিবুর রহমান মঞ্জুর ঘটনায় দুই পক্ষের এ বিরোধ নতুন করে সামনে এসেছে। গুঞ্জন আছে, নতুন নামে আসছে জামায়াত। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কড়া নজর রাখছে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।