রাস্তা নয়, ভবনের দোতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত!

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে চারতলা বিশিষ্ট ওয়াহেদ ম্যানসনের দোতলা থেকে ভয়াবহ আগুনের সূত্রপাত, এমনটাই জানিয়েছেন ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তি এবং আশেপাশে যানজটে আটকে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা জানান, ভবনটির দোতলায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়, এ সময় চারপাশের দেয়াল ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুগন্ধির ক্যানগুলোও ছিটকে পড়ছিল। এরপর চতুর্দিক দিয়ে সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

প্রত্যক্ষদর্শীদের এ বর্ণনার সত্যতা পাওয়া গেছে ঘটনাস্থলের পাশের একটি ভবনে থাকা ‘রাজমহল’ হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও। এতে দেখা যায়, ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা ৩২ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে বড় একটা বিস্ফোরণ ঘটে এবং ওপর থেকে সুগন্ধির ক্যানসহ আগুন নিচের দিকে ছিটকে পড়ছে।

এই বর্ণনা মিলে গেছে ঘটনার সময় ওই গলিতে থাকা ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমানের সঙ্গেও। বকশীবাজার দিয়ে শেখ আজগর লেন হয়ে তিনি চুড়িহাট্টা মোড়ে পৌঁছে দু–তিন মিনিটের জন্য যানজটে আটকা পড়েন। ঠিক তখনই আগুনের কবলে পড়েন তিনি। মোড়ে যানজটে আটকা পড়ার পর হঠাৎ বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পান। এরপর ওপর থেকে আগুনের ‘গোলা’ এসে গাড়ির সামনের অংশে পড়লে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। এ সময় গাড়ির ড্রাইভার ও তিনি কোনোমতে গাড়ি থেকে বের হন। গাড়িটি আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়।

এদিকে এই আগুনের উৎপত্তিস্থল নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মন্তব্যে এক ধরনের ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ঘটনাস্থলের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্তকারী একাধিক সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত আসলে ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকেই। তাদের অনুসন্ধানেও একই তথ্য মিলেছে।

ঘটনার সময় চুড়িহাট্টা গলিতে থাকা শাহাদতও পুলিশের কাছে একই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ও তার ছেলে একটি বাইকে করে ওই গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের দক্ষিণ সীমানা ঘেঁষে মোড়ের ৮-১০ ফুট আগে যানজটে ছিলেন তারা। এ সময় বিস্ফোরণ ঘটলে ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলার দেয়াল ভেঙে পড়তে থাকে। ইটের টুকরা এসে তার শরীরে ও ছেলের মাথায় পড়ে। চোখের পলকে মোটরসাইকেলটি ফেলেই ছেলেকে নিয়ে তিনি দৌড় দেন শাহাদত।

দুদিন ধরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণের পর বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম জানান, সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কোনো আলামত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। রাসায়নিক বিস্ফোরণে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে রাসায়নিক গুদাম ও সিলিন্ডার, এ দুটি বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত চলছে।

বিস্ফোরণ বা অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ওয়াহেদ ম্যানসনের দোতলা থেকে হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের কিছু লোকজন ঝামেলা করছে, খুব সাবধানে তদন্ত শেষ করে পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ দিয়ে কারণটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে।

এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও একটি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পেয়েছে। তাতে দেখা গেছে ওয়াহেদ ম্যানসনের চার পাশের দেয়াল ধসে পড়ায় পার্শ্ববর্তী ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।