৩ পানি কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল, ৭টির স্থগিত

বাজারে থাকা অনুমোদিত পানির তিনটি কোম্পানির (ব্রান্ডের) লাইসেন্স বাতিল ও সাতটি ব্রান্ডের লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করেছে পণ্যের মান নিরীক্ষাকারী সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। হাইকোর্টে দাখিল করা বিএসটিআই’র এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে-আনন্দ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এর ‘আনন্দ প্লাস’ ব্র্যান্ড (জার), রিয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এর ‘রিয়েল ফার্স্ট’ ব্র্যান্ড (জার) এবং বেস্ট ওয়ান ড্রিংকিং এর বেস্ট ওয়ান। বিএসটিআই বলেছে, লাইসেন্স বাতিল হওয়া এই তিনটি কোম্পানি পানি বাজারজাত করলে ভোক্তার স্বার্থে প্রতিষ্ঠান তিনটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর বিভিন্ন মেয়াদে লাইসেন্স স্থগিত হওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে, সেফ ইন্টারন্যাশনালের ‘ক্যানি’ ব্র্যান্ড (জার), সিনহা বাংলাদেশ ট্রেড লিমিটেডের ‘এ্যাকুয়া মিনারেল’ ব্র্যান্ড (ছোট বোতল), এএসটি বেভারেজ লি. এর ‘আলমা’ ব্র্যান্ড (ছোট বোতল), মেসার্স ক্রিস্টাল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এর ‘সিএফবি’ ব্র্যান্ড (জার), মেসার্স ইউরোটেক ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির ‘ওসমা’ ব্র্যান্ড (জার), ইউনিটি এগ্রো বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ এর ‘এপিক’ ব্র্যান্ড (জার), ফ্রুটস অ্যান্ড ফ্লেভার্স এর ‘ইয়ামি ইয়ামি’ ব্র্যান্ড (পেট বোতল)।

লাইসেন্স স্থগিত হওয়া এসব ব্র্যান্ডের ব্যাপারে বিএসটিআই বলেছে, বৈধ সিএম লাইসেন্স স্থগিতকালীন সময়ে কেম্পানিগুলো পণ্যটি বাজারজাত করলে ভোক্তার স্বার্থে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মঙ্গলার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

মঙ্গলবার দাখিল করা বিএসটিআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিএসটিআই ৬৯টি সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনা করে ৩৩৫৭৫টি অবৈধ পানির জার জব্দ করে এবং ৬৫টি নিয়মিত মামলা করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পরীক্ষার জন্য বাজার থেকে ২৮টি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টির প্রতিবেদনের মধ্যে ১২টি মানসম্মত এবং ১০টি নিম্ন মানের। এ ১০টিকে শোকজের পর তিনটি কোম্পানি জবাব দেয়নি। তাই তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকী সাতটি শোকজের জবাব দিয়ে মান উন্নয়নের জন্য সময় চেয়েছে। এ কারণে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় ৩৬ কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে। আদালতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি মো. মোখলেছুর রহমান। রিটকারী পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. জে আর খাঁন রবিন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি’ শিরোনামের প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৭ মে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করেন আইনজীবী শাম্মী আক্তার। পরে এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালত বাজারে থাকা অবৈধ-অনিরাপদ জার ও বোতলের পানির সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। পাশাপাশি আদালতের আদেশের পর বিএসটিআই কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে তা অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়।

সে অনুযায়ী এর আগে গত ২১ জানুয়ারি বিএসটিআই এক প্রতিবেদন দাখিল করে বাজারের পাঁচটি ব্রান্ডের পানি মানসম্মত নয় উল্লেখ করে। ওই পাঁচটি ব্রান্ড হলো- ইয়ামি ইয়ামি, এ্যাকুয়া মিনারেল, সিএফবি, ওসমা এবং সিনমিন। ১৫ ব্রান্ডের পানি পরীক্ষা করে এই পাঁচটি ব্রান্ডের পানির মান ঠিক নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বিএসটিআই। প্রতিবেদন দাখিলের পর হাইকোর্ট মানহীন এই পাঁচ ব্রান্ডের বিরুদ্ধে কি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্য জানাতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেয়। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার আবারও প্রতিবেদন দাখিল করে বিএসটিআই।

ওই বেঞ্চের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বোতল ও জারের পানি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিল আদালত। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ১৫টি কোম্পানির পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছি। তখন পাঁচটি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে উল্লেখ করেছিল বিএসটিআই। সেদিন আদালত অন্যান্য যেসব কোম্পানির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোরও প্রতিবেদন দিতে বলে। এছাড়া প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বাজার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইকে পরীক্ষা অব্যাহত রাখতে বলেছিল। সে অনুযায়ী বিএসটিআই আবারও প্রতিবেদন দিয়েছে।’

রিটকারীর আইনজীবী মো. জে আর খাঁন রবিন বলেন, আগের যে ৫টি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল বিএসটিআই, তার মধ্যে চারটি ব্র্যান্ডের লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেডের ‘সিনমিন’র বিষয়ে কোনো কিছু উল্লেখ নেই।