তিস্তা-যমুনাসহ ১৩ নদী পানিশূন্য, উত্তরাঞ্চলে সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয়
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
উত্তরাঞ্চলে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে যমুনা, ঘাঘট, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক শুকিয়ে গেছে। মাইলের পর মাইল এলাকা বিরান বালুভূমিতে পরিণত হয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ওই অঞ্চলের ইরি-বোরো মৌসুমে নদীনির্ভর সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দেয়ায় কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে।
গাইবান্ধার একটি নদী
তাছাড়া নদ-নদী ঘিরে জীবীকা নির্বাহ হয় এমন মানুষদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দারিদ্র্যতা, বেকারত্ব এবং অর্থ সংকট।
স্বাভাবিকভাবে বৈশাখ মাস পর্যন্ত নদীগুলোতে পানি থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এ বছর ফাল্গুনের শুরু থেকেই অস্বাভাবিকভাবে পানি কমতে শুরু করেছে। এখন তিস্তা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়াসহ ১৩টি নদী মূলত শুকিয়ে খাঁ খাঁ করছে। চারদিকে চর জেগে উঠেছে। নদীর মূল গতিপথের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
নাব্যতা সংকটের কারণে কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, জামালপুর, সারিয়াকন্দিসহ কয়েক জেলার নদীপথ এখন বন্ধ। বর্তমানে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ায়, ট্রলার বা নৌকা কোনো নৌযানই স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
এ অবস্থায় বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও যোগাযোগের জন্য ঘোড়ারগাড়ি ব্যবহার করলেও বালু ভূমির উপর দিয়ে তাও আবার ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে।
বালাসী ঘাটের ইজারাদার হাসু মিয়া বলেন, বর্তমানে ঘাট টিকে রাখা কঠিন হয়ে গেছে। নদী শুকিয়ে অন্যদিকে চলে গেছে, ফলে ঘাটের ব্যবসা শেষ। বর্ষাকালে নদীর নাব্যতা স্বাভাবিক থাকার সময় গাইবান্ধার বালাসীঘাট থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজীবপুর, কর্তিমারী, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, বাহাদুরাবাদ ঘাট, ঘুটাইল, ইসলামপুর পর্যন্ত নৌ চলাচল অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, এবছর বৈশাখ আসার আসার আগেই ফাল্গুনেনর মধ্য সময় থেকে নাব্যতা সংকটের কারণে গাইবান্ধার অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ রুটেও নৌ চলাচল দারুনভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘুরে ঘুরে দীর্ঘ সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নৌযানগুলোকে গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে হচ্ছে। আর তাই অনেক রুটে নৌযান চলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে নৌরুটগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন বালসি ঘাটের ইজারাদার।
বাহাদুরবাদ চরাঞ্চলের কৃষক ফজলুল সরকার বলেন, নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জমির সেচকাজে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ফসল রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া চরাঞ্চলের মানুষদের দূরবর্তী এলাকায় যাতায়াত কঠিন হয়ে পড়েছে।
চরবাসিন্দা আব্দুস কালাম মিয়া বলেন, বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে সেচ ব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আগে নদীর পানি থেকে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করলেও এখন ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে সেচ দিতে হচ্ছে। ফলে চাষাবাদের খরচ বেড়ে গেছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, এই নদীগুলোতে কখনও ড্রেজিং করা হয়নি। ফলে উজানে বালু আর নদী পাড় ভেঙে ভরাট হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, দহবন্দ, বেলকা, হরিপুর, কাপাসিয়া ও চন্ডিপুরসহ ৬টি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী এখন শীর্ণকায় নালার সাদৃশ্য শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার একর ভূমিজুড়ে শুধু ধু ধু বালুচর।
কাপাসিয়া এলাকার জেলে আকবর মণ্ডল বলেন, যে নদীর বুকে নৌকায় চড়ে মানুষ এপাড় থেকে ওপাড়ে যাতায়াত করতো, এখন সেই নদীতে মানুষদের পাঁয়ে হেঁটে বিশাল চর অতিক্রম করে গন্তব্যে পৌঁছায়। এক সময় যারা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো এখন তারা বেকার। এমনকি যারা নৌকায় করে লোক পারাপার করতো তারাও এখন কাজ হারিয়ে অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।
গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ইউএনবিকে বলেন, এ অবস্থা শুধু তিস্তা নদীই নয়, বরং ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতেও একই অবস্থা। পলি জমে নদী ভরাট হয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে অসংখ্য চর জেগে উঠেছে।
তিনি বলেন, নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ায় পানিনির্ভর হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা সেচ সংকটের মুখে বিকল্প ব্যবস্থায় ব্যয়বহুল সেচ পদ্ধতি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, একমাত্র ড্রেজিং করেই নদীগুলোতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রেলওয়ে ফেরি রুটে নাব্যতা সংকট দূর করতে কোনো কোনো এলাকায় ড্রেজিং শুরু করা হলেও এখন তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইউএনবি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.