প্রধানমন্ত্রী: কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সংঘাতে না জড়িয়ে, বরং আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তারা (মিয়ানমার) আমাদের নিকটবর্তী প্রতিবেশি, তাই আমরা কখনই তাদের সাথে সংঘাতে জড়াবো না। বরং আমাদেরকে আলোচনার মাধ্যমে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবিক কারণে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এটি বিশ্বের কাছে বিস্ময়কর ব্যাপার যে, আমরা কিভাবে এতো বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় প্রদান এবং তাদের রক্ষা করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সংঘাতে যাইনি। আমরা আলোচনা করেছি এবং তাদের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

তবে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। কিন্তু কেউ যদি আমাদের ওপর আক্রমণ করে, তবে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই থাকতে হবে। যাতে আমরা আক্রমণের উপযুক্ত জবাব দিতে পারি এবং আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারি। ’

যুদ্ধ না চাইলেও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রস্তুতির ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চাই না। আমরা সকলের সাথে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুসৃত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।’

প্রাকৃতিক অথবা মানবিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারি। আমরা সেটি প্রমাণ করেছি।’

আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কর্মকর্তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি দিয়ে উন্নত করা হয়েছে।

সমুদ্র সীমান্ত বিরোধ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারত ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় জয় পাওয়াটা কঠিন কাজ ছিল।

তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সকলে নিষ্ঠা, দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে কাজ করেছিল বলেই এটি শুধুমাত্র সম্ভব হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে এবং উন্নতির ধারা বজায় রাখার জন্য সকলকে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শামসুল হক, নৌ-বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রধান সমন্বয়কারী (এসডিজি বিষয়ক) মো. আব্দুল ইসলাম আজাদ ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন সেসময় উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিরক্ষা সচিব আক্তার হোসেন ভূঁইয়া।

সরকার গঠনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত জানুয়ারিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। ইউএনবি।