আপনি পড়ছেন

ভালো সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়া মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অব্যবস্থাপনার পাশাপাশি চালক ও অ্যাপ ব্যবহারকারীদের উদাসীনতাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

sharing app

তীব্র যানজট ও গণপরিবহন সংকটের সময়ে গুণগত সেবার পাশাপাশি নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে রাজধানীবাসীর কাছে অনেকটা স্বস্তি হয়ে এসেছিল অ্যাপভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা দেয়া কোম্পানিগুলো।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরবাসীকে গুণগত সেবা নিশ্চিতে সরকারের শক্ত তদারকি ব্যবস্থা থাকতে হবে। কোম্পানিগুলোকে নিয়ম-নীতি মানতে বাধ্য করতে হবে।

তারা আরও বলছেন, অ্যাপভিত্তিক সেবা দেয়া বিভিন্ন কোম্পানির নিবন্ধনধারী চালকরা বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা অনেক সময় ট্রাফিক নিয়ম অমান্য করে বেপরোয়াভাবে বাইক চালান।

গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর কলেজ গেট এলাকায় রাইড শেয়ারিং কোম্পানির নিবন্ধন থাকা মোটরসাইকেল থেকে পড়ে কাভার্ড ভ্যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফাহমিদা হক লাবন্য। উবার চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর দেশে অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা প্রথম শুরু করে উবার। পরবর্তীতে পাঠাও, ওভাই ও সহজ.কমসহ বিভিন্ন স্থানীয় কোম্পানিগুলো এ সেবা দেয়া শুরু করে।

শুরুর দিকে স্বস্তি প্রকাশ করলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বলছেন, সেবার গুণগত মান ক্রমাগত খারাপের কারণে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন।

ব্যবহারকারীদের প্রধান কয়েকটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- বেপোরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের সাথে চালকের খারাপ ব্যবহার এবং অতিরিক্ত টাকা চাওয়া, ব্যবহারকারীর চাওয়ামতো গন্তব্যস্থলে যেতে না চাওয়া, গন্তব্যস্থল জানার পর তা বাতিল করার অনুরোধ করা ইত্যাদি।

এ ব্যাপারে অ্যাপ ব্যবহারকারী বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বেশিরভাগ চালক একইসাথে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহার করে এবং সবগুলোর মধ্য থেকে তাদের পছন্দের গন্তব্যস্থলের ট্রিপটি নেন।

সাংবাদিক মঈনউদ্দিন খান বলেন, অ্যাপে নিবন্ধন পাওয়া অনেক যানবাহনের ফিটনেস নেই। অনেক চালকের নেভিগেশন (ম্যাপ) সম্পর্কে ধারণা নেই। অনেকে গাড়িতে এসি চালাতে অনীহা দেখান।

বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত তটিনী হক বলেন, উবার ও পাঠাও চালকরা অ্যাপে দেখানো ভাড়ার চেয়েও প্রায়ই অতিরিক্ত টাকা দাবি করে থাকে, না দিতে চাইলে অনেকে আবার খারাপ ব্যবহারও করে।

এছাড়া অনেক সময় অ্যাপে অস্বাভাবিক ভাড়া দেখায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একবার উবার অ্যাপ ব্যবহার করে প্রাইভেট কার নিয়ে মালিবাগ থেকে পুরান পল্টনে যাওয়ার পথে ১৫০ টাকা ভাড়া দেখালেও, ওই একই পথে ফেরার পথে ২৬০ টাকা দেখিয়েছে।’

তবে বিদ্যমান বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের মধ্যেও অ্যাপ ব্যবহারীকারীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ মোটরসাইকেল চালকদের সরবরাহ করা হেলমেট নিয়ে।

ব্যবহারকারীরা জানান, বেশিরভাগ হেলমেট শুধু নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্তই নয়, দুর্ঘটনাতেও রক্ষা পাওয়া সম্ভব নয়। পুলিশি মামলা থেকে বাঁচতেই কেবল এগুলো দেয়া হয়।

নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, রাইডশেয়ারিং কোম্পানিগুলো তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো তাদের সেবা দিচ্ছে, এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।

তিনি বলেন, ‘তারা সরকার থেকে লাইসেন্স ও তদারকি ছাড়াই অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। তাদের (কোম্পানিগুলো) বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধন না থাকায় তাদের কোনো জবাবদিহিতাও নেই।’

রাইড শেয়ারিং কোম্পনিগুলোর জন্য সরকার গত বছরে নীতিমালা তৈরি করেছে কিন্তু তা এখনো কার্যকর করা হয়নি, যোগ করেন নগর বিশেষজ্ঞ হাবিব।

ওই নীতিমালায় বলা হয়, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো এবং তাদের অধীনে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন যানবাহনের মালিকদের এ সেবা দেয়ার জন্য বিআরটিএ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএ কর্মকর্তা জানান, উবার, পাঠাও, হোস্ট ইন্টারন্যাশনাল, গোল্ডেন রেইন লিমিটেড, ওভাই সলিউশন লিমিটেড, রাইডার রাইডশেয়ার লিমিটেড, পিকমি লিমিটেড, ইজিয়ার টেকনোলজিস লিমিটেড ও কম্পিউটার সিস্টেম নেটওয়ার্ক লিমিটেডসহ ১৬টি কোম্পানি সার্টিফিকেটের জন্য বিআরটিএ-তে আবেদন জানিয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শর্ত পূরণ না করায় তাদের কাউকে সার্টিফিকেট দেয়া হয়নি। তবে কোম্পানিগুলো শর্ত শিথিলের ব্যাপারে সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’

বিআরটিএ-তে সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর দেয়া তথ্যমতে, অ্যাপভিত্তিক সেবায় এক লাখ ৪ হাজার ৩৮৯টি মোটরসাইকেল এবং ১৮ হাজার ২৫৩টি প্রাইভেট কার যুক্ত রয়েছে।

নগর বিশেষজ্ঞ ও সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলো রাজধানীবাসীর জন্য স্বস্তি হয়ে এসেছিল। ‘কিন্তু অব্যবস্থাপনা এবং চালকদের খারাপ ব্যবহারের কারণে কোম্পানিগুলোর সুনাম নষ্ট হয়েছে।’

অব্যবস্থাপনা দূর করে সেবার মান বাড়াতে সরকারের কঠোর তদারকির পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণত মোটরসাইকেল চালকরা আইন বেশি অমান্য করছেন। তারা ট্রাফিক অমান্য করায় দুর্ঘটনাও বেশি ঘটছে।’

অধ্যাপক নজরুল বলেন, চালকদের নিবন্ধন দেয়ার আগে কোম্পানিগুলোকে তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের অভিযোগের মূল্যায়ন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চালকদের প্রথাগত আচার-আচারণ পরিবর্তনে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

রাইড শেয়ারিং সেবার অবৈধ কার্যক্রম প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়টি বিআরটিএ দেখে। ‘আমরা শুধু দেখি যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র আছে কি না।’

ই-মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে উবার মুখপাত্র বলেন, তারা তাদের চালকদের ওপর নিবিড় দৃষ্টি রাখছেন। নিয়ম-নীতি লঙ্ঘনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হয় বলেও দাবি করেন উবার মুখপাত্র।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.