শোলাকিয়ায় অভিযুক্তদের ১৯ জনই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত, চার্জ গঠন হয়নি আজও

আজ থেকে তিন বছর আগের কথা, ঈদুল ফিতরের দিন। কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের প্রস্তুতি চলছিল। ঠিক সে সময় ঈদগাহের অদূরে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে অতর্কিত বোমা ও চাপাতি হামলা চালায় জঙ্গিরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে দফায় দফায় বন্দুকযুদ্ধ চলে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন পুলিশের দুই কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম ও আনসারুল হক।

অন্যদিকে, গোলাগুলির সময় নিজ বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় গৃহবধূ ঝরনা রানী ভৌমিক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

আর হামলার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলে নিহত হয় আবির রহমান নামের এক জঙ্গি। আহতাবস্থায় আটক করা হয় শফিউল ইসলাম নামের আরেক জঙ্গিকে। পরে শফিউল র্যা বের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নান্দাইলের ডাংরী এলাকায় মারা যায়।

ওই ঘটনায় করা মামলার চার্জশিট ৯ মাস আগে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও অভিযোগ গঠন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত।

এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার সরকারি কৌঁসুলি শাহ আজিজুল হক বলেন, আসামিরা ঢাকার হোলি আর্টিজান মামলারও আসামি। তাদের বিচার চলছে অন্য আদালতে। সব আসামির উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করতে হয়। অন্য মামলায় বিচার চলায় আসামিদের একত্র করা যায়নি, সে কারণে চার্জ গঠন করা সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, সন্ত্রাস দমন বিষয়ক পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম জানান, শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার মামলায় মোট আসামি ২৪ জন। তাদের মধ্যে ১৯ জন বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছে। এ কারণে অভিযোগপত্র থেকে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বাকি ৫ আসামির মধ্যে প্রথমে গ্রেফতার হয় শোলাকিয়া ও ঢাকার হোলি আর্টিজান হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় ৪ জঙ্গিকে। তারা হচ্ছে- জাহিদুল হক ওরফে তানিম, জেএমবির শীর্ষ নেতা মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, আনোয়ার হোসেন ও আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ। আসামিরা এখন কারাগারে আটক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ওই হামলার ঘটনায় ২০১৬ সালের ১০ জুলাই কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শামসুদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান কিশোরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আরিফুর রহমান।

তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জের মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহের আদালতে ১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দেন তিনি। তাতে উল্লিখিত পাঁচজনকে অভিযুক্ত করা হয়।