জট খুলছে এমপিওভুক্তির, বরাদ্দ হতে পারে হাজার কোটি টাকা

২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল, দীর্ঘ নয় বছর। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আটটি বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হলেও, এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হয়নি দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। অবশেষে আসছে বাজেটে এই জট খোলার ইঙ্গিত মিলেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে এমপিওভুক্তির জন্য এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

শনিবার এই কর্মকর্তা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তি করার জন্য বিগত আটটি বাজেটেই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বরাদ্দ দেয়া হয়নি।

শিক্ষকদের বেশ কযেক দফা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। এর আগে এমপিওভুক্তিকরণের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার বৈঠক করেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আরও জানান, বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিগত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালেও এমপিওভুক্তিতে বরাদ্দ দেয়ার পক্ষে মতামত দেন। তাই নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী হওয়ার পর এই বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম-সচিব জানান, গত ৯ বছরে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করলে সরকারের প্রতি বছর অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাই এমপিওভুক্তির এই চাপ তিন অর্থবছরে সামাল দেওয়ার চিন্তা করছে সরকার।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দুই হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে। আওয়ামীলীগ সরকার যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে। তাই বিগত বছরগুলোর মতো এবারও সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে এই খাতকে।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্য, আবেদন করা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে এমপিওভুক্তি করা সম্ভব নয়। তাই এগুলোকে পর্যায়ক্রমে তিন অর্থবছরে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৭ হাজার ১৪২টি সাধারণ স্কুল ও কলেজ এখনো এমপিওভুক্ত নয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হলে বছরে ২ হাজার ১৮৪ কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ২৫০ টাকা প্রয়োজন। সর্বশেষ ২০১০ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এরপর বাজেটের ঘাটতি থাকার কারণে দীর্ঘ ৯ বছর ঝুলে থাকে এই প্রক্রিয়া।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২ হাজার ৭৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যোগ্য বলে নির্বাচন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ১ হাজার ৬২৯টি স্কুল ও কলেজ এবং ৫৮২টি কারিগরি ও ৫৫১টি মাদ্রাসা রয়েছে।

এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের এমপিওভুক্তিকরণের জন্য প্রাথমিকভাবে ৩৩২টি স্কুল ও ২৯৯টি কলেজের একটি তালিকা তৈরি করেছে শিক্ষা শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ তালিকা অনুযায়ী স্কুলের জন্য ২৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং কলেজের জন্য ৬২৭ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ হতে পারে। বাকি অর্থ বরাদ্দ হতে পারে মাদ্রাসার জন্য।

উল্লেখ্য, গত বছর শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনে নামে। এরপর ওই বছরের জুলাই থেকে আবেদন নেয়া শুরু করে সরকার। বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২৬ হাজার ১৮০টি। এর মধ্যে রয়েছে ১৬ হাজার ১৯৭টি স্কুল, ২ হাজার ৩৬৫টি কলেজ এবং ৭ হাজার ৬১৮টি মাদ্রাসা। এছাড়া এ খাতে প্রতি বছর ১৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।