আপনি পড়ছেন

সিলেট-আখাউড়া রেলপথে ১৩টি সেতু দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব সেতুর অনেকগুলোতেই স্লিপারের নড়াচড়া বন্ধে বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে। এই রুটে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয় ট্রেন। তবুও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। রেললাইন ও সেতু সংস্কারে নেওয়া হয়নি তেমন কোনো উদ্যোগ।

sylhet train

রেল কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় গত ২৩ জুন রাতে এই রুটের কুলাউড়ায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয় উপবন এক্সপ্রেস। কুলাউড়ার বরমচালে সেতু ভেঙ্গে সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের একটি বগি ছিটকে পড়ে পাহাড়ি ছড়ায়। লাইনচ্যুত হয় আরও চারটি বগি।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ১৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩টি সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এসব সেতুর ওপর ট্রেন পারাপারে ‘ডেড স্টপ’ (সেতুর আগে ট্রেন থেমে যাবে, এরপর পাঁচ কিলোমিটার গতিতে চলা শুরু করবে) ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট থেকে মোগলাবাজার স্টেশন পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি এবং মোগলাবাজার থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে পাঁচটি সেতু ‘ডেড স্টপ’-এর আওতাধীন রয়েছে।

রেলওয়ের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অনেকগুলো সেতুই অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-শমসেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নং সেতু এবং মনতোলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু। সেতু সংস্কারের কোনো প্রকল্প না থাকায় এগুলো সংস্কার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

মনু স্টেশনের পাশে মনু ব্রিজের দুরবস্থা নিয়ে ২০১৭ সালে বিভিন্ন গনমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। মনু ব্রিজের স্লিপারের নাট খুলে যাওয়ায় কাঠের বদলে বাঁশ দিয়ে স্লিপার বানিয়ে তখন রেলসেতুটি মেরামত করে কর্তৃপক্ষ। সেই মনু সেতুটি এখনও সেই অবস্থায়ই আছে এবং রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকায়ও রয়েছে এটি।

শ্রীমঙ্গল-সাতগাঁও স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় ভইষমারা রেল সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল পাহাড়ি ঢলে সেতুটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পর থেকেই এটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা এলাকার ৫৬ নম্বর সেতু গত বছরের ২৯ মার্চ বৃষ্টির পর মাটি সরে যায়। এতে রেল যোগাযোগ কয়েক ঘন্টা বন্ধ থাকে ৷ তারপর থেকে ওই সেতুটিতে ডেড স্টপ দিয়েই চালানো হচ্ছে ট্রেন।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন ম্যানেজার সজিব কুমার মালাকার বলেন, এই সেকশনের বেশিরভাগ সেতুই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এরমধ্যে মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নং সেতুতে ‘ডেড স্টপ’ জারি করা হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুই গত রবিবারের দুর্ঘটনার কারণ কি না তা এখনই বলা যাবে না।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় জোনের তথ্য মতে, আখাউড়া-সিলেট রেলপথে পারাবত, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা, উদয়ন, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস নামের ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন গড়ে ১২ বার চলাচল করে। এসব যাত্রায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশন নিয়ে সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্রগ্রাম পথে ভ্রমণ করেন। রেল পথে যারা ভ্রমণ করেন তাদের বেশীরভাগ রেলকে বেছে নেন নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু বারবার যান্ত্রিক ত্রুটি ও দুর্ঘটনার কারণে এই রেলপথে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিন বিকল হয়ে শ্রীমঙ্গলে চার ঘন্টার মত আটকে থাকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর পারাবত এক্সপ্রেস।

গত ৫ এপ্রিল রাতে মাইজগাঁও স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় শাহজালাল সারকারখানা থেকে সার বহনকারী বিসি স্পেশাল ট্রেনের বগি‌টি লাইনচ্যুত হয়ে বেশ কয়েক ঘন্টা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে সিলেটের সাথে সারাদেশের।

১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর এলাকায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

এর আগে গত বছরের ২৮ মার্চ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী তেলবাহী একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ২ ঘন্টা বন্ধ থাকে।

গত বছরের ৭ এপ্রিল একদিনে দুইবার দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। কুলাউড়ার-মাইজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেসের বগি ও ইঞ্জিনের সংযুক্তস্থলের বাফার রিং ভেঙ্গে গেলে বগির সাথে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ২ ঘন্টা আটকে থাকে পারাবত।

একইদিন আবার ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুলাউড়া স্টেশনের পরবর্তী লংলা স্টেশন অতিক্রমকালে ট্রেনের বগি (গ-প্রথম শ্রেণি) ও চাকার সংযুক্ত একটি লোহার রড ভেঙ্গে যায়। এ অবস্থায় ভাঙ্গা রডটিসহ ট্রেনটি টিলাগাঁও, মনু স্টেশন অতিক্রম করে রাত ১২টায় সমশেরনগর স্টেশনে এসে যাত্রা বিরতি করে।

২০১৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় উপবন এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেট-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ১৫ ঘন্টা।

গত ২৩ জানুয়ারী ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেট গামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি এলাকায় ইঞ্জিনের দুর্বলতার কারনে ভোর রাতে দু’দফা আটকা পড়ে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকল্প ইঞ্জিন আসলে রেলগাড়িটি সচল হয়। এতে পাহাড়ী এলাকায় যাত্রীরা চরম ভীতি ও দুর্ভোগের শিকার হন।

গত বছরের ১২ নভেম্বর সিলেট ও মোগলাবাজার রেল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে পারাবত এক্সপ্রেসের বগি থেকে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে চলে যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার এই রুটে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে ট্রেন। যান্ত্রিক ত্রুটি, বগি লাইনচ্যুত হওয়া, বগি থেকে ইঞ্জিন খুলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। এসব কারনে বার বার বন্ধ হয়ে পড়ছে ট্রেন যোগাযোগ।

এসব বিষয়ে কথা বলতে রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে, গত ২৩ জুন কুলাউড়ায় উপবন এক্সপ্রেস টেন দূর্ঘটনায় ২ টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলের অতিরিক্ত সচিব মজিবুর রহমান। কমিটি দুটির রিপোর্ট পেয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ইউএনবি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.