কেন হত্যাকারীদের ঠেকায়নি মানুষ, কী বলছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা?

বরগুনা শহরে বুধবার দিন-দুপুরে স্ত্রীর সামনে রিফাত হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। ভয়াবহ ওই হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন- এতগুলো লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হামলা প্রত্যক্ষ করলো অথচ কেউ এগিয়ে আসলো কেন?

ওইদিন ঘটনার কাছে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন কলেজ ছাত্র নুরুল ইসলাম রনি। হত্যাকাণ্ডের সময় রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখেছেন তিনি।

রিফাতকে বাঁচানোর জন্য ভয়ে এগুতে পারেননি বলে তখন থেকে ভয়ানক মানসিক কষ্ট পাচ্ছেন এই যুবক।

নুরুল ইসলাম রনি টেলিফোনে বিবিসিকে বাংলাকে বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। খুব কষ্ট পেয়েছি। ঠিকমতো ঘুম হচ্ছে না।’

বুধবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে কলেজের সামনের রাস্তায় জনসমক্ষে যখন ওই হামলা চলছিল, রনি তখন বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ জটলা, চিৎকার শুনে তিনি এগিয়ে যান।

বরগুনা কলেজের বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদলের নেতা রনি বলেন, হামলাকারীদের বেশ কয়জনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবেও চিনতেন। বন্ধুদের মাধ্যমে নিহত যুবক নেয়াজ রিফাত শরিফকেও চিনতেন তিনি।

রনি বলেন, ‘আমি রাস্তার উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে ওদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করছিলাম মারিস না, মারিস না। ছেড়ে দে। কে শোনে কার কথা।’

এগোননি কেন? প্রতিরোধ করার চেষ্টা কেন করেননি? এই প্রশ্নে রনি বললেন সাহস হয়নি।

তিনি বলেন, ‘ওদের হাতে ধারালো অস্ত্র। অত সাহস হয়নি। আরো যদি সাথে কেউ এগুতো, তাহলে হয়তো চেষ্টা করতাম। অন্য কেউ সাহস করলো না।’

রনি জানান, বহু মানুষ জড়ো হয়ে ঘটনা দেখেছে। পাশের কলেজের ছাদ থেকেও অনেক দাঁড়িয়ে দেখেছে। মোবাইল ফোনে ছবি তুলেছে। কিন্তু কেউ প্রতিরোধের চেষ্টা করেনি।

আশপাশে কত মানুষ তখন ছিল? রনি বলেন, ‘অনেক মানুষ। শ'খানেক হবে।’

‘সবাই ভয় পেয়েছে। ওরা (হামলাকারীরা) যে কতটা ভয়ঙ্কর সবাই তো জানে,’ বলেন নুরুল ইসলাম রনি।

বরগুনার সাংবাদিক সোহেল হাফিজ বলেন, হামলাকারীদের প্রায় সবাই চিহ্নিত অপরাধী, তাদের সবাই চেনে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভয়ে এগুতে ভয় পেয়েছে।

তিনি বলেন, ‘তাছাড়া তারা বেশ কয়েকজন ছিল, ধারালো অস্ত্রের সামনে মানুষ ভয়ে এগুতে পারেনি।’

‘এদের (হামলাকারীদের) কয়েকজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাত/আটটি করে মামলা আছে। এদের একজনকে (সাব্বির আহমেদ নয়ন) তো শহরে সবাই নয়ন বন্ড নামে চেনে, নিজেকে সে জেমস বন্ড বলে ভাবে,’ বলেন হাফিজ।

বরগুনার একাধিক সূত্র বলছে, আসামিদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

বরিশালের সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম, যিনি বুধবারের হত্যাকাণ্ডের খবরাখবর দিতে এখন বরগুনায় রয়েছেন, বলেন, আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদের বাইরে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে তার কথা হয়েছে।

‘সেদিন তারা কী দেখেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন, কিন্তু ভয়ে নাম-পরিচয় বলতে চাননি। বোঝাই যায় তারা ভয় পাচ্ছেন।’