হাইস্কুলের বান্ধবী বলেছিল, তুমি তো এইডস রোগী...

জন্মগতভাবেই মরণব্যাধী এইচআইভির জীবাণু বহন করায় ভয়াবহ ও করুণ জীবন নিয়ে বেড়ে উঠছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ার লাখো শিশু। তাদেরই একজন ব্রায়ান ওমনদি। কেবলমাত্র এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ায় স্কুলে তার সঙ্গে কেউ মিশতে চায় না। এইচআইভি আক্রান্ত দেশটির প্রায় সকল শিশুকে অনেকটা একই অবস্থা মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

ব্রায়ান ওমনদি

দেশটিতে এইচআইভি ভাইরাসের ভয়াবহতায় সামজিক নিগৃহীতদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। এতে উঠে এসেছে ১৫ লাখ কেনীয় এইডস রোগীর কথা, যারা মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশ।

কিশোর বয়সে (১৪ বছর) মারা যান ব্রায়ানের মা। কিন্তু তিনি তার ছেলেকে কখনোই জানাননি যে, জন্ম থেকেই সে এইচআইভি আক্রান্ত। এমনকি মৃত্যুর সময়ও তিনি বিষয়টি গোপন করে গেছেন।

ছেলে ব্রায়নের বয়স ১০ বছর পার হওয়ার পর থেকেই ব্রায়ানের চিকিৎসা কিন্ত যথারীতি চালিয়ে গেছেন তার মা। তাকে নিয়মিত এইচআইভি প্রতিরোধক ওষুধ দিতেন। ১৪ বছর বয়সে মা মারা যাবার আগ পর্যন্ত ব্রায়ান জানতো না, সে কিসের ওষুধ খাচ্ছে।

করুণ এই দৃশ্য কেবল ব্রায়ানের নয়, এটা পুরো কেনিয়ায় সামাজিক সংকট। সন্তানেরা সামাজিকভাবে নিগৃহীত হবে- এমন ভয় থেকে মা-বাবারা বিষয়টি লুকিয়ে রাখেন।

কেনিয়ার উপকূলীয় শহর মোম্বাসায় জন্ম নেয়া ব্রায়ান জানায়, তার মায়ের মৃত্যুর পর খালার কাছে চলে যায় সে। সেখানে এ রোগের কথা প্রকাশ হয়ে গেলে প্রতিবেশীদের ঠাট্টা-তামাশার মুখোমুখী হন। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলতে দেয়া হতো না। বিষয়টি এক সময় স্কুলের সহপাঠীরা জেনে যায়।

সেই সময়ের দুঃসহ স্মৃতির কথা উল্লেখ করেত গিয়ে কাদো কাদো কণ্ঠে ২২ বছরের ব্রায়ান বলছিল, হাই স্কুলে একটি মেয়ের সঙ্গে ঘনিষ্টতা তৈরি হয়। সেই বান্ধবী আমাকে একদিন বলেছিল, তুমি তো এইচআইভি আক্রান্ত। এটি আমাকে ভীষণভাবে আহত করেছিল।

বিষয়টি মনে গভীরভাবে দাগ কাটায় এইচআইভি এক্টিভিস্ট হয়ে ওঠেন ব্রায়ান। বর্তমানে গির্জার একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কাজ করছেন।

ইউএনএইডসের হিসাব বলছে, জন্ম থেকে ১৪ বছর বয়সী ১ লাখ ১০ হাজার কেনীয় শিশু এইচআইভি আক্রান্ত। এছাড়া এইচআইভি আক্রান্ত বাবা-মায়ের মৃত্যুর কারণে জন্ম থেকে ১৭ বছর বয়সের ৫ লাখ ৮০ হাজার কিশোর অনাথ বা এতিম হয়ে যায়।