ইরান-আমেরিকা যুদ্ধ কি আসন্ন?

ইরান ও আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবার হরমুজ প্রণালীতে ইরানের একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তেহরান সে দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি তারা ভিডিও প্রকাশ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, তাদের কোনো ড্রোন খোয়া যায়নি। এর আগে একটি মার্কিন গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান।

অন্যদিকে, ইরানের তেল ট্যাংকার আটক করে অনেকটা গায়ে পড়ে তেহরানের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ব্রিটেন। গতকাল শুক্রবার ইরানও ব্রিটেনের একটি জাহাজ আটকের দাবি করেছে। ইরানের সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধ যদি লেগেই যায় সেক্ষেত্রে ব্রিটেন যে ওয়াশিংটনের পক্ষ নেবে তা আর ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না।

এমন প্রেক্ষাপটে সাজ সাজ রব ইরানের সেনাবাহিনীতেও। মার্কিন আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দিতে কোমর বাঁধছে তেহরানও। ফলে উপসাগরীয় এলাকায় উত্তেজনা ফের বাড়তে শুরু করেছে।

এই উত্তপ্ত পরিবেশের মধ্যেই ইরানকে মোকাবিলায় সৌদি আরবে প্রচুর সেনা মোতায়েন করতে চলেছে মার্কিন প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে শিগগিরই সৌদি আরবে যাবে বেশ কয়েক হাজার মার্কিন সেনা। এর জন্য অনুমতিও দিয়েছেন সৌদি বাদশা সালমান।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, সৌদি আরবের কোনো প্রত্যন্ত মরুভূমিতে আপাতত ঘাঁটি গাড়বে মার্কিন বাহিনী। এই প্রত্যন্ত মরুভূমিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সেই কারণেই প্রত্যন্ত এলাকায় আপাতত রাখা হচ্ছে মার্কিন সেনাদের। বিশাল মরুভূমিতে উপরে থাকবে ছাউনি। বালির নিচে থাকবে গভীর বাঙ্কার। সেখানে পানি, বিদ্যুৎ, নিরাপত্তাসহ পরিকাঠামো মজুত থাকবে। এই বাঙ্কারগুলিতেই থাকবে মার্কিন সেনারা।

পেন্টাগন সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহেই প্রথম দফায় হাজার পাঁচেক মার্কিন সেনা সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাবে।

আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের উত্তেজনা বাড়ায় এই অঞ্চলে আরও বেশি সেনা রাখতে চাইছে পেন্টাগন। সৌদি আরবের প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটিতে মার্কিন বাহিনীকে রাখা হবে বলে খবরগুলোতে বলা হয়েছে। কারণ ইরানের আধিপত্য খর্ব করে নিজেদের রক্ষায় মরিয়া সৌদি আরব। আর রিয়াদকে এই যাত্রায় রক্ষা করা তাদের কর্তব্য বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বেশ কিছু দিন আগে থেকেই হরমুজ প্রণালীর কাছে আন্তর্জাতিক পানিপথে মোতায়েন রয়েছে আমেরিকার উভচর যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস বক্সার। এ ছাড়া কাতারেও সম্প্রতি যুদ্ধজাহাজ ও সেনা পাঠিয়েছে আমেরিকা।

সব কিছু মিলিয়ে পরিবেশ ভেতরে ভেতরে এতটাই উষ্ণ হয়েছে যে, অল্প সময়ের মধ্যেই ইরান-আমেরিকা যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের এই রণ প্রস্তুতি আসলে মাঠ পর্যন্ত গড়াবে কি না তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

কারণ ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে, আমেরিকা ভীতি সৃষ্টির জন্য এসব করছে। বাস্তবে তারা ইরানে হামলার সাহস করবে না।

অবশ্য তেহরানের এই যুক্তি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ এই মুহূর্তে আমেরিকার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া রয়েছে ইরানের।

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা অর্থাৎ ইউক্রেন, সিরিয়া এবং সর্বশেষ ভেনিজুয়েলার দিকে তাকালে ইরানের ওই চুক্তির প্রতি আস্থা আরো বেড়ে যায়। কারণ এক রাশিয়ার জন্যই উল্লিখিত তিনটি দেশ থেকে লেজ গুটাতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকা।