প্রিয়ার বক্তব্যকে যেভাবে ব্যাখ্যা করলেন কাজল দেবনাথ

বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু ‘ডিসঅ্যাপিয়ার্ড' হয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা যে নালিশ করেছেন তা নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় বইছে।

এর মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের শীর্ষ নেতা কাজল দেবনাথ। সেখানে তিনি প্রিয়া সাহার বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন, তার বিচার হলে ‘দুর্গন্ধ আরো বাড়বে'।

ডয়চে ভেলে বলছে, কাজল দেবনাথ দাবি করেছেন যে, প্রিয় সাহা কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েছেন তা তার সংগঠন জানে না৷ অথচ সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা৷

প্রসঙ্গত, প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘নাই' (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে৷ এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে৷ আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি৷ তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে৷ কিন্তু কোনো বিচার হয়নি৷’'

এদিকে, প্রিয়া সাহার বক্তব্যে দেশে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে৷ সরকারের মন্ত্রীরাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন৷ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে ‘দেশদ্রোহী' অভিহিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন৷ আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও৷

তবে কাজল দেবনাথ প্রিয়া সাহা যে সংখ্যার কথা বলেছেন তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘প্রিয়া বলেছেন ৩৭ মিলিয়ন ডিসঅ্যাপিয়ার্ড৷ ডিসঅ্যাপিয়ার্ড শব্দটির এখন সারা বিশ্বে বাংলা অর্থ বিচার বহির্ভূত গুম৷ এটা হবে মিসিং পপুলেশন।’

তিনি বলেন, ‘১৯৪৭ সাল থেকে যদি আমরা হিসাব করি তাহলে এই ভূখণ্ড থেকে ৩৭ মিলিয়ন মানুষ হারিয়ে গেছে৷ এটা কিন্তু অংকের কাছাকাছি৷ কারণ ওই সময়ে হিন্দু ছিলো মোট জনসংখ্যার ২৯ ভাগ৷ ২০১১ সালের সর্বশেষ আদমশুমারিতে তা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ৭ ভাগ৷ তাহলে ২০ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠী মিসিং৷ আবার সে বলেছে এখন ১৮ মিলিয়ন হিন্দু আছে৷ এটাও কাছাকাছি৷ আমরা বলি ১ কোটি ৫০ লাখ, সে বলেছে ১ কোটি ৮০ লাখ৷ ১৯৪৭ সাল থেকে না বলায় বিভ্রান্তি হয়েছে৷’

বাড়ি পোড়ানো প্রসঙ্গে দেবনাথ বলেন, ‘সে বলেছে আমরা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ এটা ফ্যাক্ট৷ আড়াই মাস আগে তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ জমিজমা কেড়ে নিয়েছে৷ সে এটা নিয়ে হইচই করেছে৷ অনেকের কাছে গিয়েছে৷’

তিনি আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের ওই অনুষ্ঠানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে তিনজনের নাম চেয়েছিল৷ আমার হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান এই তিন সম্প্রদায় থেকে তিনজনের নাম দিই৷ তারা হলেন: নির্মল রোজরিও, নির্মল চ্যাটার্জি এবং সুজিত বড়ুয়৷ এখন প্রিয়া সাহা কী করে গেলেন সেটা আমরা জানি না৷ সে আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক, তবে আমাদের নমিনেটেড না৷’

কাজল দেবনাথ বলেন, ‘এর পর কথা হলো ১৩৪টি দেশের প্রতিনিধি ছিলেন৷ ৪০ জন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন৷ আমাদের ফরেন মিনিস্টারও ছিলেন৷ তিনি আমাদের দলনেতা৷ তাদের সাথে না থেকে প্রিয়া সাহা কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৭ জনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলেছেন সেখানে ঢুকলেন এটা বড় প্রশ্ন৷’

তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৭ জনের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন৷ সেই ফুটেজ কীভাবে বাইরে এলো? এটা ট্রাম্পের অফিস যদি করে থাকে তাহলে তার একটা চেইন আছে৷ সেই চেইনে বাংলাদেশ কেন নেই৷’

দেবনাথ আরো বলেন, ‘তিনি যে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে নালিশ করেছেন এটা যৌক্তিক নয়৷ এটা আমরা করতে পারি না৷ তবে তারা কেউই এখানো দেশে ফেরেননি৷ ফিরলে পুরো বিষয়টি জেনে আমরা সংবাদ সম্মেলন করব৷’

প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজল দেবনাথ বলেন, ‘মামলা তো করতেই পারে৷ রাষ্ট্রদ্রোহী মনে করলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে পারে৷ তবে বিচারে গেলে আমি তো মনে করি দুর্গন্ধ আরো বাড়বে৷’

কিন্তু কেন দুর্ঘন্ধ বাড়বে তার কোনো ব্যাখ্যা এই মুহূর্তে দিতে চাননি কাজল দেবনাথ৷