মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নিয়ে নালিশ করে হইহই ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা। মিডিয়া, অনলাইন কিংবা চায়ের স্টল সর্বত্র বইছে নিন্দার ঝড়।

priya saha 1

এর মধ্যেই নিজের দেওয়া ওই অযৌক্তিক বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রিয়া সাহা।

বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে করা এনজিও ‘শারি’র পরিচালক প্রিয়া সাহা। আর এই ‘শারি বাংলাদেশ’ এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় নিজের নালিশের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন প্রিয়া।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সরকার যে সেন্সাস (জরিপ) রিপোর্ট বের করে সেই সেন্সাস রিপোর্ট অনুসারে দেশভাগের সময় দেশের জনসংখ্যা ছিল ২৯.৭ ভাগ। আর এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা হলো ৯.০৭ ভাগ। এখন দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়নের মতো। সেক্ষেত্রে জনসংখ্যা যদি একই হারে বৃদ্ধি পেত তাহলে অবশ্যই যে জনসংখ্যা আছে সেই জনসংখ্যা অর্থাৎ ক্রমাগতভাবে যা হারিয়ে গেছে, সেই জনসংখ্যার সঙ্গে আমার তথ্যটা মিলে যায়।’

প্রিয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বারকাত পরিসংখ্যান বইয়ের ওপর ভিত্তি করে অর্থাৎ সরকারের প্রকাশিত বইয়ের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় তিনি দেখিয়েছেন, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে ৬৩২ জন লোক হারিয়ে যাচ্ছে এবং কী পরিমাণে ক্রমাগতভাবে লোক হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান বইয়ে আমি ২০১১ সালে স্যারের সঙ্গে সরাসরি কাজ করেছিলাম, যার কারণে বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত।’

৩ কোটি ৭০ লাখ সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গেছে এমনটা বোঝাতে চাননি দাবি করে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি। শব্দের প্রতিটা বিষয় যে আমরা অবগত তা নয়। আমি যেটা বোঝাতে চেয়েছি সেটি হলো- এই পরিমাণে লোক থাকার কথা ছিল। যদি স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া, যেভাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই একইভাবে যদি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২৯.৭ শতাংশ থাকতো তাহলে এই জনসংখ্যা হতো। কিন্তু তা নাই। এই যে ক্রমাগতভাবে কমে গেছে, এটা যে নাই কেন সেটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি।’

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকের করা এক প্রশ্নে প্রিয়া সাহা বলেন, ‘আমি কোনো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইনি। আমি শুধু নিজের গ্রামের কথা বলি। আমার বাড়ি পিরোজপুরে। সবাই জানেন, সেখানে ২০০৪ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ৪০টি পরিবার ছিল। এখন মাত্র ১৩টা পরিবার আছে। আমার গ্রামের মানুষগুলোকে আমি দেখেছি। এই মানুষগুলো কোথায় গেলো, কোথায় আছে, সে তো আপনাদের দেখার কথা বা আমার রাষ্ট্রের দেখার কথা। সেটা যদি আপনি আমার কাছে জানতে চান, তাহলে কেমন হবে দাদা?’

এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া বলেন, ‘আপনি আমার গ্রামে গেলে দেখে আসবেন প্রত্যেকের বাড়িঘর, কোন কোন বাড়িতে কে ছিল। প্রত্যেকের ভিটা পড়ে রয়েছে। ওই গ্রামে যদি আপনি যান প্রত্যেকের ঠিকানা, নাম, কার কী ছিল-না ছিল আপনি খুঁজে আসতে পারবেন। ৪০টি পরিবার ছিল এখন ১৩টা পরিবার আছে। ওইখানটায় যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, ২০০৪ সালে থেকে ক্রমাগতভাবে তারা চলে গেছে।’

উল্লেখ্য, গত বুধবার প্রিয়া সাহা হোয়াইট হাউসে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ (৩৭ মিলিয়ন) সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ‘নাই' (ডিসঅ্যাপিয়ার্ড) হয়ে গেছে৷ এখনো সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ থাকে৷ আমি আমার বাড়ি হারিয়েছি৷ তারা বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে৷ আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে৷ কিন্তু কোনো বিচার হয়নি৷’

প্রিয়ার ওই বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় দেশের বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ‘ক্ষুণ্নের উদ্দেশ্যেই’ প্রিয়া সাহা ‘বানোয়াট ও কল্পিত অভিযোগ’ করেছেন। প্রিয়া সাহা ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ’ করেছেন মন্তব্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রিয়া সাহাকে জবাবদিহী করতেই হবে।

এ ছাড়া আজ রোববার ঢাকা, সিলেট, ঝালকাঠি, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রুজু করার জন্য আবেদন করা হয়।

পরিস্থিতি যখন এই তখন নিজের নালিশের ব্যাখ্যা দিলেন বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.