চোখ আটকে যায় কলকাতার ‘নাখোদা মসজিদে’

কলকাতার অন্যতম প্রধান মসজিদের নাম 'নাখোদা মসজিদ'। বাংলা ভাষাভাষী কলকাতায় এই মসজিদই সবচেয়ে বড় আর প্রাচীন। মধ্য কলকাতার বড়বাজারের চিতপুর অঞ্চলে অবস্থিত মসজিদটি যাকারিয়া স্ট্রিটের একেবারে সংযোগস্থলে অবস্থিত। অনেক দূর থেকেই লাল রঙের এই দৃষ্টি নন্দন মসজিদটি যেকোনো মানুষের নজরে পড়বে।

আগ্রায় অবস্থিত মুঘল সম্রাট আকবরের সমাধির আদলে ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে লাল-বেলে পাথরে বিখ্যাত এই মসজিদটি নির্মিত হয়। আর মসজিদটির প্রবেশে পথ বানানো হয় আগ্রার ফতেহপুর সিক্রির বুলন্দ দরজার আদলে। মসজিদটি তৈরি করেছিলেন কচ্ছের নামের একটি ক্ষুদ্র সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় 'কাচ্ছি মেমন জামাত'।

মসজিদ নির্মাণে অর্থ দান করেন সেই সম্প্রদায়ের নেতা আব্দুর রহিম ওসমান। তিনি পেশায় সমুদ্র বণিক। জাহাজে জাহাজে নাবিকের মতো ঘুরতেন। তার সঙ্গে মিল রেখেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়। ফারসি শব্দ নাখোদা এর অর্থ নাবিক।

এটিই বর্তমান কলকাতার সবচেয়ে বড় মসজিদ। মসজিদের চাতালটি অনেক বড় এবং দ্বিতল। মসজিদের ইমাম এবং খতিব মাওলানা মোহাম্মদ শফিক কাশেমি জানান, মসজিদটা ভরে গেলে এখানে এক সঙ্গে ১৫ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদের দিন এই মসজিদ প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে লাখের বেশি মানুষের নামাজ আদায় করেন। শুক্রবারও দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শুধু নামাজ পড়তেই নয়, মসজিদটি দেখতেও প্রতিনিয়ত আসেন।

১৯২৬ সালে তৈরি নাখোদা মসজিদ স্থাপত্যের দিক থেকে যেন এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। সাদা মার্বেলের দেয়াল, বেলজিয়াম কাচ, বিশাল নামাজ পড়ার জায়গা, দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো কাঠের ঘড়ি— ভাঁজে ভাঁজে ইতিহাসের গন্ধ। তৎকালীন মসজিদটি নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৫ লাখের বেশি রুপি। যার বর্তমান বাজারমূল্য নিঃসন্দেহে কয়েকে শ কোটি টাকা।

মসজিদটিতে একটি গম্বুজ, দুটি বড় মিনার ও ২৫টি ছোট মিনার রয়েছে। বড় মিনার দুটির উচ্চতা ১৫১ ফুট আর ছোট মিনারগুলোর উচ্চতা ১০০ ফুট থেকে ১১৭ ফুটের মতো। চাতাল দুটি নির্মিত হয়েছে দুর্লভ গ্রানাইট পাথর দিয়ে। পাথরগুলো বিহারের তোলেপুর থেকে সংগ্রহ করা হয়। মসজিদটির ভেতরে রয়েছে চোখ ধাঁধানো অলঙ্করণ ও সৃজনশীলতা।

মসজিদকে কেন্দ্র করে আশপাশে দুর্লভ কিছু সুগন্ধী আতর পাওয়া যায়। হরিণের কস্তুরী থেকে তৈরি হওয়া আতরও পাওয়া যায়। বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং তুরস্কের নকশী টুপিও পাওয়া যায় এখানে। প্রত্যেক বছর ঈদ বা রমজানকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে সাজানো হয় এই নাখোদা মসজিদ।