পাউডারের নামে ভায়াগ্রার চালান, সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড়

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সাদা পাউডারের নামে আড়াই হাজার কেজি ভায়াগ্রার উপাদান আমদানি করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। বেনাপোল বন্দরে ধরা পড়া ওই বিশাল চালানের ব্যাপারে আমদানিকারকদের পক্ষে রিপোর্ট দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সায়েন্স ল্যাব বা বিসিএসআইআর। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চলছে তোলপাড়।

বেনাপোল বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে সাদা পাউডারের আড়ালে ভায়াগ্রার ওই বিশাল চালানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আইবি ট্রেডার্স থেকে আমদানি করে ঢাকার মিটফোর্ডের (আমদানিকারক) প্রতিষ্ঠান মেসার্স বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানের বেনাপোল স্থানীয় সিএন্ডএফ এজেন্ট সাইনী শিপিং সার্ভিসেস।

বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজ ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ বা এসএসজি পাউডার ঘোষণা দিয়ে ওই চালানটি ভারত থেকে আমদানি করে। ওষুধ তৈরির উপাদান হিসেবে ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ এই চালানে যে পরিমাণ পাউডার ছিল, বন্দরে তার মূল্য দেখানো হয় ১২ কোটি টাকা। আর চালান বাবদ সরকারকে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা ট্যাক্সও দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

কিন্তু চালান নিয়ে সন্দেহ হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এর পর সেটি আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। এর পর বন্দরের নিজস্ব ল্যাবে টেস্টের পর চালানে ভায়াগ্রার উপাদান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও এর নমুনা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সায়েন্স ল্যাব, ড্রাগ প্রশাসনের ল্যাবে পাঠানো হয়।

তবে সব প্রতিষ্ঠান চালানে ভায়াগ্রার উপাদান আছে মর্মে নিশ্চিত করলেও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত তথা আমদানিকারকদের পক্ষে রিপোর্ট দেয় সায়েন্স ল্যাব। অথচ আমদানি করা খাদ্য জাতীয় পণ্যের ব্যাপারে সরকারের এই প্রতিষ্ঠান হ্যাঁ বললেই দেশে ঢুকতে পারে। ফলে যুব সমাজের ধ্বংস সাধনকারী ভায়াগ্রার এত বড় চালান নিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটির পক্ষপাতমূলক রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

ল্যাব টেস্টের বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের যুগ্ম-কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা নিজেদের ল্যাবে পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হয়েছি, এটি ভায়াগ্রার চালান। তার পরও অধিকতর প্রমাণের জন্য সরকারের অন্যান্য দপ্তরে স্যাম্পল পাঠানো হয়।

এদিকে, সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্ট সম্পর্কে জানতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিচালক ডা. শাহীন আজিজকে ফোন করলে তিনি ওই রিপোর্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সঙ্গে সঙ্গেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এদিকে, ভারত থেকে আমদানি করা ওই সাদা পাউডারের চালানে যে ভায়াগ্রার উপাদান রয়েছে তা নিশ্চিত করেছেন খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যামিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বাদল এবং ড্রাগ প্রশাসনের পরিচালক নাইয়ার সুলতানা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর এ সংক্রান্ত একটি চিঠি লিখেছেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল চৌধুরী।

চিঠিতে তিনি বলেছেন, ‘যে ভায়াগ্রার উপাদান আটক করা হয়েছে, তা বাজারে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট ফরমেটে বিক্রি হয়। যে চালানটি আটক করা হয়েছে, তা দিয়ে ১০০ মিলিগ্রামের ২ কোটি ৫০ লাখ ভায়াগ্রা ট্যাবলেট তৈরি সম্ভব। যার বাজার মূল্য প্রায় ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।’

চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সরকারি অন্য সংস্থার ল্যাব টেস্টে আটক চালানের পরীক্ষায় ভায়াগ্রার উপাদান পেলেও বিসিএসআইআর’র রিপোর্টটি প্রভাবিত ও পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ আর কোনো ল্যাবেই পণ্যটি ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ হিসেবে শনাক্ত হয়নি। এ ব্যাপারে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধও করা হয়েছে চিঠিতে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল চৌধুরী বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন যে, ট্রাকভর্তি আড়াই টন ভায়াগ্রা তড়িঘড়ি করে খালাসের পূর্বমুহূর্তে গোপন সংবাদ পেয়ে জব্দ করি।

তিনি বলেন, বিসিএসআইআরের রিপোর্ট সঠিক ধরে বিধি মোতাবেক শুল্কায়ন করা হয়। আমার অবাক লাগে, বিসিএসআইআর ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ নাম কোথা থেকে পেল! আমাদের চিঠিতে কোথাও এ নাম ছিল না। আমরা আশঙ্কা করছি, ভায়াগ্রাও ইয়াবা হয়ে উঠতে পারে। একটা দেশবিরোধী অপরাধী চক্র এর সঙ্গে জড়িত। নানাভাবে চাপ ও প্রভাব খাটিয়ে চালানটি খালাসের চেষ্টা করছে।

এদিকে, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বায়েজিদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, বেনাপোল কাস্টমস আমাদের বিশাল চালানটি আটকে দিয়েছে। তারা সন্দেহ করছে আমরা ‘সোডিয়াম স্টারর্স গ্লোকোলেট’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে যে চালানটি এনেছি তাতে ভায়াগ্রার উপাদান আছে।

তবে সায়েন্স ল্যাবের রিপোর্টে তা বলা হয়নি। তার পরও কর্তৃপক্ষ যেহেতু ভায়াগ্রা বলছে, তাই আমি পশ্চিমবঙ্গের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান আইবি ট্রেডার্সের কাছে চিঠি লিখেছি। চিঠির উত্তর এলে জানা যাবে।