‘এনআরসি আসামে অন্ধকার ডেকে এনেছে’

গত ৩১ আগস্ট ভারতের আসামে যে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে তা কিন্তু পূর্ণ তালিকা নয়। কেননা যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম কিছু দিন আগে আমরা বাদ পড়তে দেখেছি। এদের মধ্যে প্রায় ২৩ লক্ষ নাম উঠেছে তালিকায়। আর বাদ গেছে যারা তারাই হচ্ছে গিয়ে সেই ১৯ লক্ষ। এতে কিন্তু দারুণভাবে প্রমাণিত হলো- আসামের মানুষ বিপন্ন। এর মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি।

কথাগুলো ভারতের প্রখ্যাত লেখক ও প্রাবন্ধিক এবং আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য।

ভারতীয় গণমাধ্যম তপোধীর ভট্টাচার্যের বরাত দিয়ে বলেছে, পঞ্চাশের দশকের একটু পর থেকেই আমরা দেখেছি, অসমীয়া আধিপত্যবাদীরা নির্জলা মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছেন যে, ৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে নাকি দলে দলে লোক এসে ঢুকে যাচ্ছে আসামে।

এমনকি আসামের এক সময়ের রাজ্যপাল, আজকে ভারত শাসন করছে যে দল তিনি সেই দলেরই একনিষ্ঠ সমর্থন ছিলেন, এমন কথা বলেছিলেন যা রাজ্যপালের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসে বলা যায় না।

তিনি বলেছিলেন যে, প্রতিদিনই নাকি ৬ হাজার লোক বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢুকছে। এটা যে কত বড় মিথ্যা, সেটা এখন আমরা বুঝতে পারি। কারণ, তাই যদি সত্যি হতো তাহলে বাংলাদেশ এতদিনে জনশূন্য হয়ে যেত।

তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, প্রমাণিত হলো যে, কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে এনআরসি করে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বহু মানুষের আত্মহত্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং আরো মানুষ আত্মহত্যার বাইরে ও নানা রোগে ভুগে মারা গেছেন। সেই রোগগুলোর কারণও কিন্তু এই এনআরসি।

তিনি আরো বলেন, শাসক দল ও আমলাতন্ত্র সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চাইছেন যে, আসামে অসমীয়ারা সংখ্যালঘু। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। যাদেরকে বহিরাগত বলা হচ্ছে তারা আসলে বহিরাগত নন। তারা সকলেই অবিভক্ত ভারতবর্ষের নাগরিক। সেই সব মানুষেরা নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ পড়েছেন। তাই এনআরসি আসামে অন্ধকার ডেকে এনেছে বলে আমার মনে হয়। আজ বিপন্ন মানুষের পাশে আমাদের দাঁড়ানো উচিৎ।