দালালকে টাকা দিলেই সহজে মিলছে পাসপোর্ট!

দালালকে টাকা দেওয়ার বিনিময়ে খুব সহজেই মিলছে বাংলাদেশি নাগরিকতার অন্যতম পরিচয়পত্র পাসপোর্ট। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা। একই অবস্থা বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকদের ক্ষেত্রেও। ঘুষ দেয়া ছাড়া কোনভাবেই পাসপোর্টের দেখা মিলছে না।

রোহিঙ্গারা কীভাবে পাসপোর্ট পাচ্ছেন, এ বিষয়ে চট্টগ্রামের মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, দালালকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলেই পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যান আবেদনকারীরা। পাশাপাশি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কোন ধরনের ঝামেলাও পোহাতে হয় না। কিন্তু দালালের মাধ্যমে না গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশনে জটিলতাসহ নানা বাধায় পাসপোর্ট হাতে পেতে লেগে যায় দীর্ঘ সময়।

অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশ আবেদনকারীর উল্লেখ করা ঠিকানায় গিয়ে যাচাই-বাছাই করার কথা থাকলেও বেশিরভাগ সময়ই পুলিশ তা করে না। বরং আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার সুবিধামতো স্থান অথবা থানায় গিয়ে দেখা করে আসতে হয়। এ সময় পুলিশ আবেদনকারীর কাছ থেকে চা-পানির কথা বলে টাকা আদায় করে। টাকা না দিলে বিভিন্নভাবে নাজেহাল হতে হয় আবেনকারীকে। মাসের পর মাস কেটে গেলেও পাসপোর্ট অফিসে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পাঠায় না পুলিশ। তাই হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে দালালের সহযোগিতা নেয় অবেদনকারীরা।

চট্টগ্রামের ওই বিভাগীয় অফিস থেকে পাসপোর্ট তৈরি করেছেন এমন একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশ আবেদনকারীর কোন তথ্যই যাচাই-বাছাই করে না। শুধু টাকা নেয়ার জন্য আবেদনকারীর সঙ্গে দুই একবার দেখা করে। টাকা যদি দালালদের কাছ থেকে পায়, তাহলে আবেদনকারীর সঙ্গে দেখাই করেন না তারা।

ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পাওয়া এক ব্যক্তি জানান, কিছুদিন আগে জরুরি ভিত্তিতে একটি পাসপোর্ট করার জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে যান তিনি। সেখানে গিয়ে তিনি এক দালালকে পাসপোর্ট তৈরির দায়িত্ব দেন। এরপর থেকে তাকে আর কোন কিছুই করতে হয়নি। এক সপ্তাহ পর দালাল তার হাতে পাসপোর্ট তুলে দেয়।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিত্রও দেখা যায়। যাচাই বাছাই করা হয় আবেদনকারীর সকল তথ্য। তেমনি একজন আবেদনকারী চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসান হাসান নেহা। গত ৫ জুলাই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তিনি। এরপর ১৫ জুলাই পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য তার বাসায় আসে। ২০ জুলাই কোন ধরনের ঝামেলা ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যান তিনি। তবে এ ধরনের ঘটনা খুবই কম।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের দালাল সাইফুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভেরিফিকেশন ছাড়া তার মাধ্যমে একটি সাধারণ পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। আর পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ হলে দিতে হবে ৭ হাজার ৩০০ টাকা। জরুরী ভিত্তিতে কোন পাসপোর্ট করতে হলে ১২ হাজার টাকা দিতে হবে। তাহলেই নাকি পাসপোর্ট নিয়ে আর কোন টেনশন করতে হবে না। কোন ধরনের হয়রানি ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবে আবেদনকারী।

এ সম্পর্কে জানাতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশ আবেদনকারীর সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেয়। আবেদকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ ঠিক আছে কিনা সেটিও মিলিয়ে দেখে। যদিও এগুলো দেখা বাধ্যতামূলক নয়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ যদি মামলার তদন্তের মতো পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন করতো তাহলে আবেদনকারীকে পাসপোর্ট হাতে পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। আবার সকল বিষয় যাচাই করতে গেলে আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন, টাকা খাওয়ার জন্য পুলিশ তাদের নাজেহাল করছে। আর এমন কোন ঘটনা যদি ঘটে তাহলে সেই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সুতরাং কোন পুলিশ সদস্যই এই ধরনের কাজ করে বিপদে পড়তে চাইবে না।

চট্টগ্রাম পুলিশের উপ-কমিশনার (স্পেশাল ব্রাঞ্চ) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, আগে কোন ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই আবেদনকারীরা পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন রিপোর্ট পেয়ে যেতেন। কিন্তু বর্তমানে এ ধরনের ঘটনা শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেয়া আছে, যেন একটি ভেরিফিকেশন রিপোর্টও যাচাই-বাছাই ছাড়া জমা দেয়া না হয়।