এনআরসি আতঙ্কে পশ্চিমবঙ্গে নিহত ৪

গত ৩১ আগস্ট ভারতের আসাম রাজ্য এনআরসি তথা নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে ১৯ লাখ লোক বাদ পড়েছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে তারা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারবেন। কিন্তু তাতে আর কতজন নাগরিকত্ব ফিরে পাবেন বা আইনের চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত লড়াই করতে (আর্থিক সামর্থের কারণে) পারবেন। ফলে লাখ লাখ লোক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে, ভারতের বিজেপি সরকার নানা সমালোচনা সত্ত্বেও বার বার বলে আসছে, দেশটির সব রাজ্যে এনআরসি করা হবে। বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করা নিয়ে এক পায়ে খাড়া মোদি সরকার। এই আতঙ্কেই গত কয়েক দিনে পশ্চিমবঙ্গে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় গণমাধ্যমের।

অবশ্য দিল্লি সফরে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) নিয়ে নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর ২৪ ঘণ্টাও না যেতেই ওই চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

খবরে বলা হয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫২ বছরের আমেনা বেওয়ার। স্বজনরা বলছেন, এনআরসির চিন্তায় পুরনো দলিল খুঁজতে বাঁকুড়ায় বাপের বাড়ি অবধি দৌড়েছিলেন আমেনা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নথি খুঁজে পাননি। তার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এত দিন বিড়ি বেঁধে সংসার চলত। প্রতিবেশীরা বলছেন, আমেনা ভয় পাচ্ছিলেন, সেই সংসারই হয়তো আর থাকবে না।

খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘রাজনীতির এই নোংরা খেলা বন্ধ না হলে এনআরসি আতঙ্কে আরও অনেকের মৃত্যু হবে।’ তবে নবান্নে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এদিন সকলকে আশ্বস্ত করে জানান, ভয়ের কিছু নেই, এই রাজ্যে এনআরসি হবে না।

কিন্তু তার আশ্বাসের আগেই রাজ্য জুড়ে দাবানলের মতো এনআরসি উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের মিলন মণ্ডল (২৭) আত্মঘাতী হওয়ার পর পরিবারের লোকেরা ভিটে হারানোর ভয়ের কথাই বলেছিলেন।

শুক্রবার জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ির বাসিন্দা ৩৯ বছরের অন্নদা রায়ের আত্মহননের পরও একই অভিযোগ তুলেছেন তার আত্মীয়েরা।

এমনই উদ্বেগ এ দিন বালুরঘাটে রেশন কার্ড ডিজিটাল করানোর লাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫২ বছরের মন্টু সরকার। ঠাঁ ঠাঁ রোদে কয়েক শ লোকের পিছনে ছিলেন তিনি। দীর্ঘক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরে পড়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

ইটাহারের সোলেমান সরকার ওপার বাংলা থেকে এসেছিলেন ১৯৬৫ সালে। এনআরসি শোনার পর থেকেই ভিটে হারানোর উদ্বেগে ছিলেন। এ দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ছেলেরা বলছেন, গত কয় দিন সমানে প্রমাণপত্র নিয়ে খোঁজ করছিলেন তিনি।