প্রধানমন্ত্রীর প্রতি নুর: নির্যাতনের অধিকার ছাত্রলীগকে কে দিলো?

বিগত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারমুখী ভূমিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অধিকার ছাত্রলীগকে কে দিয়েছে?’

সোমবার বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ডাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন ডাকসুর ভিপি। 

নুর বলেন, ‘কোনো ছাত্র যদি অপরাধ করে থাকে, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রয়েছে। তাদের হাতে তুলে দেন। তারাই ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ছাত্রলীগকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার অধিকারটা কে দিলো?’

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি প্রশ্ন রেখে নুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যিনি এক সময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। যিনি ছাত্রলীগের দেখভালেরও দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু এই ছাত্রলীগ যখন দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন জায়গায় বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে তখন তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।’

ভিপি নুর বলেন, ‘আজ ছাত্রলীগ ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে মিছিল-মিটিং করাচ্ছে। তাদের কথা না শুনলে শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ বাংলাদেশের সেরা প্রতিষ্ঠান বুয়েটের মতো একটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করে সিঁড়িতে তার লাশ ফেলে রেখেছে।’

ছাত্ররা দৃর্বৃত্তায়নের রাজনীতির হাতে জিম্মি বলেও মন্তব্য করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা। পাশাপাশি ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির শৃঙ্খল ভাঙার আহ্বান জানান তিনি। 

নুরুল হক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছিল তখন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার চিপসের বক্স রাখার দায়ে তখনকার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে ওই ছেলেকে বেদম প্রহার করে পুলিশের তুলে দিয়েছিলেন।’

ভিপি নুর বলেন, ‘আজকে ছাত্রলীগকে ছাত্র সংগঠন বলতেও লজ্জা হয়। আপনারা দেখেছেন তাদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চাঁদাবাজি ও অর্থ কেলেঙ্কারির কারণে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’

হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের মধ্যে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। না হলে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ক্ষেপে গেলে তারা পালানোর রাস্তা পাবে না।’

ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে নুর বলেন, ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নেতাদের কুকুরের মতো মারা হয়েছিল। ছাত্রলীগের কুলাঙ্গাররা কোটা আন্দোলনের সময় সেন্টাল লাইব্রেরির সামনে আমাকেও নির্মমভাবে মেরেছিল। সেদিন যদি লাইব্রেরির তিনশত সাধারণ ছাত্র বের হয়ে আসতো তাহলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস ছাড়া হয়ে যেত। এর পর ডাকসুর ভিপি হয়েও নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সেখানে সাধারণ ছাত্ররা ও জনগণ কীভাবে নিরাপদ।

সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের মানুষ আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত। সবার পিঠ আজ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে না পারেন তাহলে এই স্বৈরশাসন ও স্বৈরশাসকদের জাতাকলে যুগে যুগে আমাদের পিষ্ট হতে হবে।’