আপনি পড়ছেন

ঢাকার নগরবাসীর জন্য হাতিরঝিলের মতো আরও কিছু নান্দনিক স্থাপনা তৈরির মাধ্যমে রাজধানীকে ঘিরে থাকা চার নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র করতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তারা মনে করছেন, এ পদক্ষেপ নদী দখলমুক্ত, পুনরুদ্ধারকৃত জমি রক্ষা, নদীর তীরকে সুন্দর ও নদীর পরিবেশের উন্নয়নের মাধ্যমে নদী চারটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে।

hatirjheel 1

বিআইডব্লিউটিএ বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর পুনরুদ্ধারকৃত জমিতে পিলার স্থাপন, নদী তীর সুরক্ষা, চলাচলের রাস্তা, নৌ ঘাট এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (দ্বিতীয় ধাপ) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চারটি নদীকে বাঁচাতে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ সীমানা মেনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা উচিত।

২০০৯ সালে হাইকোর্ট নদীর তিনটি অংশ- নদীর স্তর, নদীর পাড় ও নদী তীর সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞা দিয়েছিল এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চারটি নদীর চারপাশের সঠিক সীমানা নির্ধারণ করতে এবং নদীগুলোর তীরে সীমানা পিলার স্থাপনের আদেশ দিয়েছিল। হাইকোর্ট সরকারকে নদী তীর ধরে পায়ে হাঁটার পথ নির্মাণ এবং গাছ রোপণ করতে বলেছিল।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে, প্রকল্প পরিচালক নুরুল আলম বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ৮৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হয়েছে এবং ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে।

‘আমরা প্রকল্পটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

তিনি বলেন, প্রকল্পটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে চারটি নদীর তীরে হাতিরঝিলের মতো বিনোদনমূলক জায়গা তৈরি করা যায়, যেখানে নগরবাসী তাদের নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে পারবেন এবং বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।

সাম্প্রতিক সময়ে চালনো অভিযানে নদী দখলকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৫২ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে উল্লেখ করে আলম বলেন, ইতিমধ্যে আমরা প্রথম পর্যায়ে জমিতে ৩৮০৩টি আরসিসি সীমানা পিলার নির্মাণ শুরু করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫২ কিলোমিটার পায়ে হাঁটার পথ, ১০ হাজার ৮২০টি সীমানা পিলার, ৪০ কিলোমিটার সীমান প্রাচীর, তিনটি ইকো পার্ক, দুটি পর্যটক-বান্ধব পার্ক, ০.৩৩ কিলোমিটার আরসিসি সেতু, ১০০ আরসিসি সিঁড়ি, ১০৫ কিলোমিটার বেড়া, ১১টি আরসিসি জেটি, ছয়টি খেয়ানৌকা, ৩৮টি দ্রুতগামী নৌকা, ৪০৯টি টুল ও চারটি নদীর আশপাশের অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

আলম বলেন, এছাড়াও নদীর তীরে নদী-সুরক্ষার সবুজ বলয় তৈরি করা হবে যা পরিবেশ রক্ষা করবে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রকল্পটি নদীগুলো রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশকে বাঁচাতে সহায়তা করবে। ‘এটি যাত্রীদের চলাচল সহজ করবে, লোকজন কয়েকটি বিনোদনমূলক কেন্দ্র পাবে যেখানে তার সময় কাটাতে পারবে।’

তিনি বলেন, দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে লোকজন সাধারণত নদীর তীরে যান না। ‘এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকার আশপাশের নদীগুলো জীবন ফিরে পাবে এবং জনগণ কিছুটা ভালো সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন।’

জলবায়ু ও নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সের মতো সভ্য দেশগুলোতে নদীর ধারে বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। ‘তাই, আমি মনে করি এটি একটি ভালো প্রকল্প।’

‘প্রকল্পটি কে নকশা করেছে আমি জানি না। আমার পরামর্শ হলো প্রাসঙ্গিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হোক। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে যথাযথ স্থানে সীমানা পিলার স্থাপন করা উচিত।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক এমএ মতিন বলেন, এ কথা সত্য যে সরকার গত এক বছরে কয়েকটি নদীর জমি দখলদারদের কাছ থেকে পুনরুদ্ধার করেছে, তবে বেশিরভাগ জমি এখনও দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা যায়নি। ‘সরকারের উচিত প্রথমে চারটি নদীর জমিগুলো দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা এবং তারপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা।’

তিনি বলেন, বর্তমান প্রকল্পটি অবশ্যই একটি ভালো প্রকল্প, তবে এটি হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে বাস্তবায়ন করা উচিত। ‘অন্যথায়, এটি নদীগুলোর বিপরীত একটি প্রকল্প হবে। কারণ কিছু পুনরুদ্ধারকৃত জমি প্রকল্পের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে এবং বাকি জমিগুলো চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে।’

নদী গবেষক ও রিভারাইন পিপলসের মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চারটি নদীকে পুনরুদ্ধারের প্রকল্পকে স্বাগত জানাই। তবে আমরা এর আগে দেখেছি যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো ভুলভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ করেছে এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা না মেনে নদীপথগুলোতেই বেশিরভাগ সীমানা পিলার স্থাপন করেছে যা নদী খেকোদের নদীর তীর দখল করার নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিল। আমরা এমন ভুলের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।’

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি নদীর বাস্তুসংস্থান বজায় রেখেই বাস্তবায়ন করতে হবে। কংক্রিট কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা উচিত নয় যা জলজ প্রাণির বাস্তুসংস্থানকে বাধা দেবে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.