রাজ্যে রাজ্যে ডিটেনশন ক্যাম্প, গোটা ভারতে হবে এনআরসি

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আগাম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে। তার মানে গোটা ভারতেই এনআরসি (নাগরিকপঞ্জি) করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে দেশটির কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।

এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে বেশ কয়েকজন আত্মহত্যা করেছেন, যদিও রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস বার বার আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবেই হোক এনআরসি করবে এবং শেষ পর্যন্ত মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার তা ঠেকাতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, আসাম রাজ্যে এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হওয়ার আগেই অনেকের নাগরিকত্বকে ‘সন্দেহজনক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। তাদের ‘ডি-ভোটার’ করে দেওয়া হয়েছিল। অনেককেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে। কোকরাঝাড় এবং গোয়ালপাড়া জেলায় কয়েকটি সংশোধনাগারের মধ্যেই সেই ডিটেনশন ক্যাম্পগুলি তৈরি করা হয়েছিল। তবে এবার গোয়ালপাড়ায় আলাদা জমি চিহ্নিত করে সেখানে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি শুরু হয়েছে।

শুধু আসামে নয়, কর্নাটক এবং মহারাষ্ট্রেও তৈরি হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্প। দুটোই বিজেপি শাসিত রাজ্য। কর্নাটকে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে বেঙ্গালুরু থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সোন্ডেকোপ্পায়। সে রাজ্যের প্রশাসন যদিও ওই পরিকাঠামোর বিষয়ে বলার সময়ে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ শব্দটি ব্যবহার করছে না। বলা হচ্ছে- ‘গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ (মুভমেন্ট রেস্ট্রিকশন সেন্টার)।

অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের নভি মুম্বাইতে যে ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করার বিষয়ে রাজ্য প্রশাসন আরও সতর্ক। বলা হচ্ছে, বেআইনি পাসপোর্ট মামলায় অভিযুক্তদের ওখানে রাখা হবে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কিন্তু রাখঢাক করেননি। নিউজ ১৮-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, দেশের নানা প্রান্তে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে কারণ, সরকার গোটা দেশে এনআরসি চালু করার জন্য ‘আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে’।

অমিত শাহের সাক্ষাৎকারটিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সারা দেশের জন্যই এনআরসি চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। সরকার সেই পথেই এগোবে। সেই প্রক্রিয়ার গতি যে এবার বাড়ানো হচ্ছে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন অমিত শাহ।

প্রত্যাশিতভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক শিবিরে। এ রাজ্যে কিছুতেই এনআরসি করতে দেওয়া হবে না বলে বার বার মন্তব্য করছেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক সভা-সমাবেশে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। বলেছেন— বাংলায় তিনি এনআরসি করতে দেবেন না। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও দেওয়া শুরু হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। বলা হচ্ছে, কারও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, রাজ্য সরকার যতক্ষণ না চাইছে, ততক্ষণ রাজ্যে এনআরসি করার ক্ষমতা কারও নেই।

কিন্তু অমিত শাহের সাক্ষাৎকার আবার বুঝিয়ে দিয়েছে, এনআরসি নিয়ে পিছু হঠার কথা একেবারেই ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার।