হোস্টেলে ঢুকে ছাত্রীদের ওপর নিপীড়ন চালায় ছাত্রলীগ!

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে হোস্টেলে প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন আবাসিক ছাত্রীরা। দীর্ঘদিন ধরে চলা এমন অরাজকতার কথা অবহিত করলেও কলেজ প্রশাসন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলেও অভিযোগ করেন তারা।

মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ

ছাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কলেজ ছাত্রলীগের পরিচয়ধারী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী অনায়াসে রাতে কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে আসা-যাওয়া করছে। দলবল সহকারে তারা ঢুকে যাচ্ছে যে কোন ছাত্রীর কক্ষে। রান্না করে খাওয়াতে বাধ্য করা হচ্ছে অনেককে। অনেকেই আবার তাদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন। অথচ অভিযোগ জানানোর পরও বিষয়টি নিয়ে একেবারেই নিশ্চুপ রয়েছে কলেজ প্রশাসন।

সর্বশেষ গত রোববার রাতে কলেজর ছাত্রী হোস্টেলে ঘটা এক অনাকাঙ্খিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকালে অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষের কাছে অভিযোগ জানান আবাসিক হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রী। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে বসবাসরত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী জানান, রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাতের খাবার শেষ করে নিজের কক্ষে ফিরছিলেন তিনি। এ সময় তিনি দেখতে পান, হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে কলেজ ছাত্রলীগের এক নেতা একটি মেয়েকে হেনস্থা করছেন।

এ সময় সঙ্গে থাকা অন্য মেয়েদের সহযোগীতায় তিনি ভুক্তোভোগী মেয়েটিকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ওই নেতার তিন-চারজন সহযোগী তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে সিঁড়ির রেলিংয়ে ওপর পড়ে গিয়ে একটি মেয়ের হাত কেটে যায়।

এ ঘটনায় আহত হওয়া ছাত্রী হোস্টেলের ওই শিক্ষার্থী জানান, ঘটনার পরপরই হোস্টেলের মেট্রন (তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত) নাসরিন আকতারকে পুরো বিষয়টি অবহিত করেন তারা। কিন্তু তিনি ছাত্রীদের চুপ থাকার নির্দেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর হোস্টেলে পুলিশ আসলেও নাসরিনের ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি। তবে এ ঘটনায় হোস্টেলে বসবাসকারী সবাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানান তিনি।

বিষয়টি নিয়ে হোস্টেলের মেট্রন নাসরিন আকতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ছাত্রীদের লাঞ্ছনার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, রোববার রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগ পরিচয়ে বেশ কয়েকজন যুবক ছাত্রী হোস্টেলে আসে। তারা হোস্টেলের রাঁধুনী রাজিয়া বেগমকে মুরগি আর পোলাওয়ের চাল দিয়ে ১৫ জনের খাবার রান্না করতে বলে চলে যায়। পরে রাত ৯টার দিকে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাব্বিসহ ১০-১৫ জন যুবক খাবার নিতে আসে এবং কিছুক্ষণ পর তারা খাবার নিয়ে চলে যায়।

রান্নার বিষয়ে হোস্টেলের রাঁধুনী রাজিয়া বেগম বলেন, সারাদিন অনেক কাজ করার পরও রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবার রান্না করতে বললে তার কিছু করার নাই। তাদের ভয়ে মুখ বুঝে কাজ করতে হয়।

ছাত্রী হেনস্থার এমন অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফাহিম ফয়সাল রাব্বির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে রাব্বির মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে মাগুরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলি হোসেন মুক্তা বলেন, কলেজ হোস্টেলের ছাত্রীদের এ অভিযোগ সত্য নয়। আর জেলার সভাপতি মেহেদি হাসান রুবেল জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে এবং সত্যতা মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষ বলেন, দায়িত্বে অবহেলা করায় ইতোমধ্যে হোস্টেলের মেট্রন নাসরিন আকতার ও রাঁধুনী রাজিয়া বেগমকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দিবেন।