রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও দৌলতদিয়া নৌ-ফাঁড়ি পুলিশের সহযোগিতায় জেলেরা ইলিশ শিকার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, প্রতিদিন নৌকা প্রতি নির্দিষ্ট হারে টাকা পরিশোধ করে আভিযানিক দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে নামছে জেলেরা। এতে করে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। তবে নিজেদের বিপক্ষে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছে থানা ও নৌ-পুলিশ।

goaland file photo

উপজেলার দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও উজানচর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন থেকে নদীতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযানকালে তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা নদীতে নামছে। আভিযানিক দল নদীতে নামার আগেই জেলেরা খবর পেয়ে যায়, ফলে সহজে তারা ধরা পড়ে না।

অভিযোগ রয়েছে, গত বৃহস্পতিবারও দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশের একটি দল মৎস্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে নদীতে নামে। তিনজন জেলেকে আটকের পর তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ছেড়ে দেয়া হয়।

ইন্তাজ মণ্ডল নামের এক জেলে মুঠোফোনে জানান, জেলেদের পাশাপাশি জাল ও ইলিশ মাছ জব্দ করেছিল ওই পুলিশ সদস্যরা। পরে ৯ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকারের অভিযোগে রাজবাড়ী পুলিশের এএসআই শফিকুল ও কনস্টেবল উসমান অভিযানিকদলের হাতে আটক হলে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়।

প্রসঙ্গত, ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মৎস্য বিভাগ প্রতি বছরের ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন নদীতে মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ শিকার করায় ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫ জনকে আটক করা হয়। যার মধ্যে গত মঙ্গলবার আটক হওয়া ১৩ জন জেলেও রয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ে প্রায় চার লাখ ৭৪ হাজার মিটার কারেন্ট জাল এবং ৫৭৭ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করে প্রশাসন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার নদীর পাড়ে অস্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছে জেলেরা। দৌলতদিয়ার কলাবাগান, উজানচরের মহিদাপুর, দেবগ্রামের অন্তারমোড় জেলেরা সেখানে জড়ো হয়। আভিযানিক দল যখন নদীতে অভিযানে নামে তারা কিছু নির্দিষ্ট নালায় নৌকা নিয়ে লুকিয়ে পড়ে। জেলেদের নৌকাগুলো ইঞ্জিনচালিত হওয়ায় সহজে তাদের ধরা যায়না বলে উপজেলা প্রশাসন স্পিডবোট নিয়ে অভিযান শুরু করলে অনেকে ধরা পড়ে।

মজনু তালুকদার নামে একজন টাকা আদায়ের পর পুলিশে দেয়ার বিষয় স্বীকার করে বলেন, ‘ওসির সাথে কথা বলে ইয়াকুব, নাজেম, জলো, আলিম, হাসেম, ইউসুফ, লতিফসহ ১০জন মিলে প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা হারে আদায় করে প্রতিদিন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসিকে ৩০ হাজার করে টাকা দেই।’

গত ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩০ হাজার করে টাকা পরিশোধ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২২ অক্টোবর নদীতে অন্য পার্টি অভিযানে নেমে আমার নৌকা ধ্বংস করে এবং ভাগ্নেকে ধরে নিয়ে যায়। সেই সাথে রাজবাড়ী সদরে দুই পুলিশ আটক হলে আমরা টাকা তোলা বন্ধ করে দেই।’

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দ ও লোকবল সংকটের সাথে পুলিশের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। গোয়ালন্দ থানা ও নৌ-ফাঁড়ি পুলিশ ইচ্ছেমতো অভিযান চালায়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) এমনটি করেছে নৌ-পুলিশ।

‘থানা পুলিশও কলাবাগান এলাকার বেশকিছু নৌকা থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করে বলে জেনেছি। যার ফলে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ লাবু মিয়া বলেন, ‘সবসময় মৎস্য বিভাগ ও এসিল্যান্ডকে জানিয়ে অভিযানে যাওয়া হয়।’

গত বৃহস্পতিবারের অভিযানে নৌ-পুলিশ যাওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘জরুরি খবর পেয়ে সেখানে একটি টিম নেমেছে। বিষয়টি এসিল্যান্ডকে জানানো হয়েছে।’

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলামও নিজের বিরুদ্ধে ওটা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাকে সরাতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ ধরনের অভিযোগ করেছে। টাকা নেয়ার প্রশ্নই আসেনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে লাখ লাখ টাকার লোভ সামলাচ্ছি সেখানে সামান্য ৫০০ টাকা করে নেয়া তো অকল্পনীয় বিষয়। একটি মহল আট-ঘাট বেঁধে আমাকে বদলির জন্য আবেদনও করেছে।’

এদিকে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সমন্বয়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরকে থানা বা নৌ-পুলিশকে সহযোগিতা করার কথা। কিন্তু উল্টো তারাই আমাদের না জানিয়ে নিজেরা নদীতে নামছে, বিষয়টি দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘থানা ও নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।’ ইউএনবি। 

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.