আসিফ নজরুল: হলগুলোর টর্চার সেল বন্ধ করুন

'দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে সন্ত্রাস করতো ছাত্রদল আর এখন করছে ছাত্রলীগ' এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, আমরা কখনোই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করেত চাই না, আমরা রাজনীতির নামে এই ছাত্র সন্ত্রাসকে বন্ধ করতে চাই। ছাত্র সংগঠন করার নামে হলে হলে যে টর্চার সেল আছে, যে দুর্নীতির আখড়া আছে সেটাকে বন্ধ করতে চাই।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের আহ্বানে গণরুম-গেস্টরুম সমস্যা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের এক উম্মুক্ত আলোচনায় এসব কথা বলেন আসিফ নজরুল। আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীম উদ্দীন খান, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুবসহ আরো অনেকে। আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেন প্রমুখ।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই সন্ত্রাস কে করে? এই সন্ত্রাস মূলত করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন। বিএনপির আমলে ছাত্রদল করেছে এখন ছাত্রলীগ করছে। এর বাইরে আমরা আরেকটা সংগঠনের নাম জানি- ছাত্রশিবিরের কথা। যখন তাদের সুযোগ ছিল তারাও ইচ্ছামত সন্ত্রাস করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু উদাহরণ আছে। হয়ত সুযোগ পেলে আবারও সন্ত্রাস করবে।’

আসফি নজরুল অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের প্রতি আহ্বান রেখে বলেন, আমার কথা হচ্ছে আপনারা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলেন। আজকে ছাত্রলীগ সন্ত্রাস করছে আপনারা ছাত্রদলকে সাথে নিয়ে, সবাইকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করেন। ভবিষ্যতে যখন ছাত্রদল আন্দোলন করবে তখন ছাত্রলীগকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করবেন। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। বিশুদ্ধবাদী মনোভাব রেখে দিনে দিনে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হতে পারবেন। যেই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে, হলে সন্ত্রাস হয় সেই দেশ উন্নত দূরের কথা সেই দেশ সভ্য কি না সেই প্রশ্ন আমাদের করতে হবে।’

আইনের এই অধ্যাপক বলেন, দেশের দণ্ডবিধির দেড়শ বছরের পুরানো। সেখানেই তো লেখা আছে আপনি কাউকে টর্চার করতে পারবেন না, কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন না, আপনি কারো প্রাইভেসিতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, কাউকে পিটিয়ে হল থেকে বের করতে পারবেন না। এগুলো তো ফৌজদারি অপরাধ এবং মেরে ফেললে তো মৃত্যুদণ্ড হওয়ার কথা। এই অপরাধ যখন হলে হলে হয়, তখন এই রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনী, এই রাষ্ট্রের আদালত, আইন বিচার ব্যবস্থা কোথায় থাকে? যে আইন আছে তাকে কার্যকর করতে হবে।

এসময় তিনি প্রতিটি হেলের গেটে সিসিটিভির ব্যবস্থা এবং প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া একজনও যেন হলে ঢুকতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।পাশাপাশি বৈধ ছাত্রের বাইরে অর্থাৎ নিয়মিত ছাত্রের বাইরে একদিনও যারা আছে তাকে অবশ্যই বের করে দিতে হবে বলে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, চার বছরের মধ্যে অনার্স শেষ করার কথা এর বাইরে একদিনও যারা থাকবে বের করে দিতে হবে। এছাড়াও হলে হলে একটা করে হটলাইন নাম্বার চালুর আহ্বান জানান তিনি।